৫ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক ছাঁটাই

যুগান্তর :  চলতি মাসের শুরুতে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকারখানার অন্তত পাঁচ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ছাঁটাই করেছে। এ তথ্য দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের জন্য কাপড় তৈরি করা শ্রমিকরা মজুরি বাড়াতে বিক্ষোভ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। এর পরিণতি হিসেবে তাদের চাকরি খোয়াতে হয়েছে।

নতুন বছরের শুরুতেই দেশজুড়ে হাজার হাজার শ্রমিক দিনব্যাপী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। এতে বাংলাদেশের ৩০০ কোটি ডলারের পোশাক কারখানার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

ঢাকার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত ও আরও অর্ধশত আহত হয়েছেন। বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা এইচ অ্যান্ড এম, ওয়ালমার্টসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য আশুলিয়ায় পোশাক সেলাই করা হয়।

পুলিশ বলছে, বিক্ষোভের সময় লুটপাট ও ভাঙচুরে জড়িত তৈরি পোশাকশিল্পের কয়েক হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

এ ছাড়া কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন ও ধরপাকড়ের অভিযোগ আনছে ইউনিয়নগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, এ পর্যন্ত চার হাজার ৮৯৯ শ্রমিককে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগে ছাঁটাই করা হয়েছে।

কেবল একটি কারখানা থেকেই এক হাজার ২০০ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন, যাদের বেতন মাত্র ৯৫ ডলার থেকে শুরু।

ইউনিয়নগুলো বলছে, ছাঁটাইয়ের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হবে, যা প্রায় সাত হাজারের কাছাকাছি। বিক্ষোভে জড়ো হওয়ায় প্রায় শতাধিক শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে ব্যাপকভিত্তিক গ্রেফতার নিয়ে পুলিশের তরফে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন শিফন বলেন, বহু শ্রমিক কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিন হাজার অজ্ঞাত শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই ভয়ে কাজে যোগ না দেয়াকেই পছন্দ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তারা।

ধর্মঘট ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও সরকার সামান্য মজুরি বাড়াতে রাজি হওয়ার পর তার অবসান ঘটে। সরকারি ঘোষণায় কোনো কোনো শ্রমিকের জন্য মাসে মাত্র কয়েক সেন্ট মজুরি বেড়েছে।

আমসটারডামভিত্তিক ক্লিন ক্লোথস ক্যাম্পেইনের বেন ভ্যানপেপারসট্রি এইট বলেন, সম্প্রতি শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোয় সংশোধনের পরও পরিস্থিতি আগের মতোই রয়ে গেছে। কারণ এসব শ্রমিকের মজুরি এখনও দরিদ্রসীমার মধ্যেই।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের ভীতিপ্রদর্শন ও তাদের সংগঠিত হওয়ার পথ রুদ্ধ করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার তৈরি পোশাক কারখানায় ৪১ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যা বিশ্বে চীনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তর পোশাক রফতানিকারক।

বলতে গেলে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের আশি ভাগ আসে বিদেশে পোশাক বিক্রি করে। এ ছাড়া এসব কারখানা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষমতা রাখে।

ঢাকায় শ্রমিক ধর্মঘটের রেশ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেটের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর শুরু হয় এ বিক্ষোভ।

গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী আল-জাজিরা টেলিভিশনকে বলেন, ২০০৮ সালে যখন আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন গার্মেন্ট শ্রমিকদের গড় মজুরি ছিল ১৬০০ টাকা। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার টাকায়। যদিও এটি কম তা আমি স্বীকার করি।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের বেতন আরও বেশি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমাদের সরকারের আমলে পাঁচগুণ মজুরি বৃদ্ধি প্রশংসনীয়। শুধু সরকারকে দোষারোপ করা উচিত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *