নতুন স্বপ্ন শেয়ারবাজার নিয়ে

ন্যাশনাল ডেস্ক: ২০১৮ সালটি শেয়ারবাজারের জন্য ছিল মন্দার বছর। সদ্য বিদায়ী বছরটিতে সূচক, লেনদেন, বিদেশি বিনিয়োগ, বাজার মূলধনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব সূচকের পতন ঘটেছে। তবে ভোটের পরে শুরু হওয়া নতুন বছরটি আশা জাগাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মনে।
গত দুই দিনে বাজারে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও ঊর্ধ্বমুখী। গতকাল বুধবার দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন পৌঁছেছে ৬৯৬ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে ১৬৬ কোটি টাকা বেশি। গত দুই দিনে বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১১১ পয়েন্ট। তাতেই মন্দার বছর কাটিয়ে শেয়ারবাজার আশা জাগাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
২০১৮ সালে শেয়ারবাজারের সব সূচক খারাপ থাকলেও ডিএসইর হাত ধরে বছরটিতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ দেশে এসেছে। ডিএসইর মালিকানার ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে গত বছর যুক্ত হয়েছে চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত জোট। ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও কর্মসূচি (স্কিম) অনুযায়ী চীনের জোটের কাছে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর এ শেয়ার বিক্রি করা হয়।

যদিও এ শেয়ার বিক্রি নিয়েও তুমুল আলোচনা তৈরি হয়। কারণ, ডিএসই চীনের জোটের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও বিভিন্ন মহল থেকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে গঠিত জোটের কাছে এ শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ডিএসইর সদস্যদের অনড় অবস্থানের কারণে চীনের জোটের কাছে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত বছর শেয়ারবাজারের সাফল্য বলতে চীনের জোটের যুক্ত হওয়ার ঘটনা।

তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য মোটেই সুখকর বছর ছিল না ২০১৮ সালটি। বছরটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮৫৯ পয়েন্ট বা ১৪ শতাংশ কমে গেছে। এ সূচক বছরের একপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৩১৮ পয়েন্টের অবস্থানে উঠলেও বছরের শেষ ভাগে এসে তা সর্বনিম্ন ৫ হাজার ২০৪ পয়েন্টে নেমে আসে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ২৪২ কার্যদিবসে ঢাকার বাজারে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। যেখানে ২০১৭ সালে লেনদেন হয়েছিল ২ লাখ ১৬ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। মোট লেনদেন কমে যাওয়ায় দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণও কমেছে সদ্যবিদায়ী বছরে। ২০১৮ সাল শেষে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ কমে নেমে এসেছে ৫৫২ কোটি টাকায়। ২০১৭ সাল শেষে যেখানে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৭৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০১৮ সালে এসে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৩২৩ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে শেয়ার বিক্রি ছিল আমাদের তথা শেয়ারবাজারের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা। বছরের লম্বা সময় ধরে আমরা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তাই বছরটিতে নতুন আর কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৯ সালে এসে নতুন বেশ কিছু উদ্যোগ যুক্ত হবে ডিএসইতে। যার সুফল পাবেন বাজারের সঙ্গে যুক্ত সবাই।’

মাজেদুর রহমান বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আলাদা এসএমই বোর্ড চালুর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে আনা হয়েছে। আশা করছি এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যেই সেটি চালু করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ইটিএফ চালুর কাজও প্রায় গুছিয়ে আনা হয়েছে। এর বাইরে চলতি বছর বন্ড লেনদেনের উদ্যোগ, শেয়ারবাজারের লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য গঠিত সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ নামে নতুন কোম্পানি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে, গত বছরটিতে উল্লেখ করার মতো ভালো কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। ফলে বাজারের গভীরতা বাড়েনি। এ কারণে বছরজুড়েই বিভিন্ন বাজে কোম্পানির শেয়ার নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারসাজির ঘটনা ঘটে। এসব কারসাজির মাধ্যমে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হলেও কারসাজির বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শক্ত কোনো অবস্থান দেখা যায়নি।

সূচক ও লেনদেনে মন্দাভাব থাকলেও গত বছর বাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১২টি সিকিউরিটিজ। তা সত্ত্বেও বাজার মূলধন আগের বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ কমে নেমে আসে ৩ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *