কুমারখালীতে ড্রেজিংয়ে খননের ফলে গড়াই নদী এখন সচল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার অবহেলিত এলাকা বলে পরিচিত পান্টি, যদুবয়রা, বাগুলাট, চাঁদপুর ইউনিয়ন। গড়াই নদীর ফলে এসকল ইউনিয়নের হাজার হাজার জনগন ভোগান্তিতে ছিলো। ড্রেজিংয়ের ফলে পাল্টে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গড়াই নদীর পানি প্রবাহের চিত্র। গত কয়েক বছর পূর্বেও এই গড়াই নদী হেঁটে পার হওয়া যেত। নদীর কুমারখালী খোকসা ও কুষ্টিয়া শহর এলাকা দিয়ে দুই পাড়ের লোকজন হেঁটে পারাপার হতো। তবে এখন ভিন্নচিত্র। নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে। নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানাগেছে, গড়াই নদীকে সচল রাখতে ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় নিদ্ধারণ করে গত বছরের ২৪ অক্টোবর উৎসমুখ তালবাড়িয়া থেকে শুরু হয় খনন কাজ। ইতিপূর্বে দুই দফা খনন ব্যর্থ হয়ে গেলেও এবারের খনন সফলতা পেয়েছে।
প্রতি বছর বর্ষায় উৎসমুখে প্রচুর পলি পড়ে পদ্মা থেকে গড়াই নদীতে পানি প্রবেশ বন্ধ হয়। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে গড়াই নদী শুকিয়ে যায়। এছাড়া কয়েক বছর অপরিকল্পিত খননে নদী একেবারে সংকুচিত হয়ে আসে। খননকাজেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আসে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নদী পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে মানিকগঞ্জের পরিবর্তে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগকে এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভেড়ামারা ড্রেজার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর মাস থেকে তারা তালবাড়িয়াসহ কয়েকটি পয়েন্ট থেকে খননকাজ শুরু করে। নদীকে পুরোপুরি সচল রাখার স্বার্থে এবার পরিকল্পতি খননের ওপর জোর দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ৬ কিলোমিটার এলাকা সচল করতে একদফা খননকাজ করা হয়। এরপর ডিজাইন অনুযায়ী উৎসমুখ পদ্মায় ৩২০ মিটার চওড়া করে খননকাজ শুরু হয়, পর্যায়ক্রমে তা ১০ মিটারে এসে শেষ হবে। পুরো কাজ শেষ হলে পানিপ্রবাহ আরও বাড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর ১৯ লাখ ঘন মিটার বালু অপসারণ করা হবে। জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা আছে।গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, আগের তুলনায় অনেক বেশি চওড়া করে খননকাজ হচ্ছে। নদী থেকে বালু কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরে ফেলা হচ্ছে। যাতে বৃষ্টিতে এ বালু নদীতে ফিরে না আসে। পুরো খননকাজ শেষ হলে নদীর চিত্র আরো অনেকটা বদলে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গোলাম সারওয়ার বলেন, খননের ফলে গড়াই নদী এখন সচল। পরিকল্পিত খননের ফলে এবার চিত্র বদলে গেছে। পানিপ্রবাহ ও লেভেল বেড়েছে। এ নদী বাঁচলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্রসহ পরিবেশ রক্ষা পাবে। গড়াই নদীর সঙ্গে সুন্দরবনের মিঠাপানির সম্পর্ক রয়েছে। তাই অতীতে যেসব অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এলাকার সচেতন মহল সুষ্টুভাবে খনন কাজ হবে এমন প্রত্যাশা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *