আবরার বেঁচে থাকলে আজ ২২ বছর পূর্ণ হতো

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের ২২তম জন্মদিন ছিল গতকাল বুধবার। একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গত বছরের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন।

জন্মদিনে কুষ্টিয়ায় বাড়ির পাশের একটি মসজিদে আবরারের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। ছেলের জন্মদিনটিতে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করেন মা রোকেয়া খাতুন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আবরার বেঁচে থাকতেও কখনো ঘটা করে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়নি।

আবরার ঢাকায় পড়ালেখা করার কারণে এই দিনে বাবা বরকত উল্লাহ ও মা তাঁকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন। বলতেন, বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ভালোমন্দ খেয়ে নেওয়ার জন্য। ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ অন্য স্বজনরাও তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতেন।

এদিকে কয়েক দিন আগে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি আবরারের বাবা ও ভাইকে ফোন করে হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার যে প্রস্তাব দিয়েছিল সে বিষয়ে আবরারের মা বলেছেন, ছেলের হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার প্রশ্নই ওঠে না।

গতকাল সকাল থেকেই আবরারের মা-বাবা, ভাইসহ স্বজনদের মন ছিল বিষণ্ন। আবরারের মা সারাদিন ছলের স্মৃতি হাতড়ে কেঁদে কাটিয়েছেন। বিকেলে কুষ্টিয়া শহরের বাড়ির পাশের মসজিদে আবরারের জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, কাছে না থাকলেও সন্তানের জন্মদিন প্রত্যেক মা-বাবার কাছেই অন্য রকম এক অনুভূতির দিন। কিন্তু এবারে আমার ছেলের জন্মদিনের অনুভূতি আমি প্রকাশ করতে পারব না। আবরার যখন বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল, তখন আমাদের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে সব আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ হয়ে গেছে।

রোকেয়া খাতুন বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি আমার আব্বুর (আবরার ফাহাদ) জন্মদিন। ১৯৯৮ সালে যেদিন ওর জন্ম হলো সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। বাংলা মাঘ মাস। এক সপ্তাহ ধরে শীতের কুয়াশায় মোড়ানো ছিল চারপাশ।

তিনি জানান, নিজের জন্মের সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই বাবাকে হারিয়েছিলেন। তাই ছেলে জন্মের পর থেকেই তাঁকে আব্বু বলে ডাকতেন। জন্মের পর পাঁচ বছর বয়সে মাত্র একবার ঘটা করে বাড়িতে আবরারের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল।

মারা যাওয়ার আগে চার বছর ধরে ঢাকায় থাকতেন আবরার। পড়াশোনার জন্য জন্মদিনগুলো ঢাকাতেই কাটাতে হতো। সেসব দিনে সকালে ঘুম থেকে উঠেই রোকেয়া খাতুন ছেলেকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। ভালোমন্দ খেতে বলতেন। আর এবার ছেলের জন্মদিনে কেবল কষ্টই বাড়ছে আর কান্না। তিনি বলেন, আবরারের জন্ম ও মৃত্যুর দিন আমার জন্য কেবলই কান্নার।

কয়েক দিন আগে ফোন করে এক ব্যক্তি আবরার হত্যা মামলার আসামিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন—এমন অভিযোগ করে রোকেয়া খাতুন বলেন, ছেলের হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার প্রশ্নই ওঠে না। আবরারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ভাইয়ের জন্মদিনে ঘটা করে অনুষ্ঠান হতো না, কিন্তু সেটা পরিবারের জন্য একটা আনন্দের দিন ছিল।

এখন দিনটি কেবলই কষ্টের। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবরার এবং আমাদেরকে নিয়ে কিছু লোক নানা গুজব ছড়াচ্ছে। এসব উপেক্ষা করে আমরা ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায় রয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *