অনলাইন ডেস্ক: পৃথিবীতে আজ শান্তি ও নিরাপত্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমানে আমাদের বিশ্ব যেসব বড় বড় সমস্যায় জর্জরিত এসব পরিস্থিতিকে যদি এক বাক্যে বলতে হয় তা হলে মৌলিক সমস্যা হলো, শান্তি উঠে যাওয়া আর এটি নিরসনে আজ পর্যন্ত যত চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা হয়েছে তা বাহ্যত সবই ব্যর্থ হয়েছে।জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে। পুরো মানবজাতি আজ অস্থির যে, তাদের কখন, কোথা থেকে এবং কীভাবে শান্তি নামের অমূল্য সম্পদ জুটবে। হ্যাঁ, পুরো বিশ্বে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে কিন্তু তা কেবল পবিত্র কোরআনে উপস্থাপিত শিক্ষামালা অবলম্বনের মাধ্যমেই সম্ভব।কোরআন মজিদ আল্লাহতায়ালার সেই পবিত্র বাণী যা রহমান ও রহিম খোদা অবতীর্ণ করেছেন। আর এটি এক পূর্ণাঙ্গীন ও পরিপূর্ণ এবং স্থায়ী শরিয়ত হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে, যে বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক নূর এবং উজ্জ্বল কিতাবও। এর মাধ্যমে আল্লাহ সেসব লোককে শান্তির পথে পরিচালিত করেন, যারা তার সন্তুষ্টির পথে চলে। আর তিনি নিজ আদেশে তাদের অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যান এবং সরল সুদৃঢ় পথে তাদের পরিচালিত করেন’ (সুরা মায়েদা : ১৫-১৬)।রসুল পাক (স.)-এর কল্যাণম-িত পুরো জীবন এ বিষয়ের জীবন্ত সাক্ষী, তিনি শান্তি ও নিরাপত্তার এক মহান মূর্তিমান প্রতীক হিসেবে জীবনযাপন করেছেন এবং চরম প্রতিকূল ও কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্তির পতাকা উঁচু রেখে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, কোরআনি শিক্ষামালার ওপর আমল করলে পরই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তার মাক্কিজীবনী এবং মাদানিযুগেও তার পুরো জীবনাদর্শ এমন সব ঘটনাবলিতে পরিপূর্ণ যে, কীভাবে রসুলপাক (স.) তাঁর মান্যকারীদের কোরআনের শিক্ষামালার কল্যাণে শান্তির মূর্তিমান প্রতীক বানিয়ে দিয়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি মুসলমানদের সামনে এক পরম সহানুভূতিপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ উত্তম নৈতিক আদর্শ উপস্থাপন করেছেন।যুদ্ধের নাম নিলেই তো বর্তমান যুগের নামসর্বস্ব সভ্য দেশগুলো নম্রতা, নৈতিক আচরণ, সহমর্মিতা এবং ন্যায়বিচারের সব দাবি সম্পূর্ণভাবে ভুলে যায় কিন্তু বিশ্বশান্তির মহানায়ক হজরত মুহম্মদ (স.) যুদ্ধ এবং হানাহানির ক্ষেত্রগুলোয় শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে এমন অতুলনীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছেন যা সব যুগে পুরো মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে। মক্কা বিজয়ের দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট সাক্ষী। তার সব খুনি শত্রুদের ক্ষমা করে বিশ্ব ইতিহাসে সেই দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন যা কেয়ামত পর্যন্ত এর কোনো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন চুক্তি পালনের ক্ষেত্রে মহানবী (স.) সর্বদা এমন আদর্শ দেখিয়েছেন, যার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।শান্তির অভিযাত্রা এক ব্যক্তি সত্তা থেকে শুরু হয়। এর বীজ মূলত সবচেয়ে প্রথমে মানুষের হৃদয়ে বপন করা হয়। এটি যখন বর্ধিত হয় তখন সেই ব্যক্তির পরিবার শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে। এর পর এটি পারিবারিক জীবনকে ছাড়িয়ে শান্তির এই কল্যাণ সমাজে এবং চারপাশে বিস্তার লাভ করে। এর পরবর্তী ধাপ জাতীয় শান্তি ও নিরাপত্তা হয়ে থাকে যা অবশেষে আন্তর্জাতিক শান্তির রূপ ধারণ করে নেয়। এটি কোনো ধারণাপ্রসূত ও কাল্পনিক ফর্মুলা নয় বরং এটি এমনই সত্য যার প্রকাশ পুরো বিশ্বে দৃষ্টিগোচর হয়। কোরআন মজিদ শান্তির বীজ হিসেবে আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বে পূর্ণ ইমান আনাকে উপস্থাপন করেছে। এর স্পষ্ট প্রমাণ হলো, যারা আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বে জীবন্ত ইমান রাখে তারা কখনো অস্থিরতা বা মানসিক চাপের ততটুকু শিকার হয় না যাতে নিজের জীবন সম্পর্কেই নিরাশ হয়ে যেতে হয়।আমরা দেখি সেসব মনোনীত ব্যক্তি যাদের আল্লাহতায়ালা নিজে বেছে নিয়ে নবুয়তের মর্যাদায় ভূষিত করেন তাদের হৃদয়ে এমন শান্তি ও প্রশান্তি ভরে দেন যে, পার্থিব জগতের শত বিরোধিতা এবং বিপদাপদের ঝড়-তুফান সত্ত্বেও তারা সর্বদা আল্লাহতায়ালার আঁচলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে শান্তি ও নিরাপত্তার জান্নাতে জীবন কাটান। কোরআন মজিদ এই মৌলিক বিষয়টিকে এভাবে বর্ণনা করেছে, হৃদয়ে প্রকৃত ও সত্যিকারের শান্তি ও স্বস্তি আল্লাহতায়ালার স্মরণেই পাওয়া সম্ভব আর আল্লাহতায়ালাকে স্মরণ করার সম্পদ আল্লাহতায়ালার সত্তায় পূর্ণ ইমান বলেই পাওয়া যায় (সুরা রাদ)।প্রকৃতপক্ষে হৃদয়ে যদি আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকে এবং দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হয়ে যায় তা হলে এটিই সেই ব্যবস্থাপত্র যা বিশ্ব শান্তির নিশ্চিত ও সত্যিকার মাধ্যম। এই মূলনীতি বর্ণনা করার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন বলে, শান্তি ও নিরাপত্তার অভিযাত্রা পরিবার থেকে শুরু হয়। পরিবারগুলোকে শান্তির নীড়ে পরিণত করার জন্য এবং জান্নাতসদৃশ বানানোর জন্য পবিত্র কোরআন পূর্ণাঙ্গীন শিক্ষামালা উপস্থাপন করেছে।
মাহমুদ আহমদ : ইসলামি গবেষক ও কলাম লেখক