কক্সবাজার সাগর তীরে উঁচু স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

অনলাইন ডেস্ক : কক্সবাজার সমুদ্রের তীরে উচ্চ-স্থাপনা নির্মাণ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রের তীর ঘেঁষে উচ্চ-স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেব না।

তিনি বুধবার সকালে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে (পিএমও) কক্সবাজার এলাকায় নির্মানাধীন তিনটি স্পেশাল ট্যুরিজম পার্কের (বিশেষ পর্যটন উদ্যান) মাস্টার প্ল্যান অবলোকনকালে এ নির্দেশ প্রদান করেন।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষকে (বেজা) মহেশখালীতে সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক এবং টেকনাফ উপজেলায় নাফ ট্যুরিজম পার্ক (এনএএফ) এবং সাবরং ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মাস্টার প্ল্যানগুলোর লক্ষ্য হলো বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্র, দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং পরম্পরাকে রক্ষা করে পর্যটনবান্ধব অঞ্চল গড়ে তোলা এবং কক্সবাজার জেলার আওতাধীন বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করা।

প্রধানমন্ত্রী ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ সহনশীল করে ট্যুরিজম পার্কের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহবান জানান।

তিনি বলেন, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখেই ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করতে হবে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বালুময় সমুদ্র সৈকত আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান বলেন, এই ৮০ মাইল দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত বিশ্বের অন্যতম সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র।

প্রধানমন্ত্রী সাবরং ট্যুরিজম পার্কটি কেবলমাত্র বিদেশিদের জন্যই নির্মাণের নির্দেশনা দেন।

তিনি প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে এই পার্কটি নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, এটি এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে অন্যান্য দেশের পর্যটকেরা এর প্রতি আকর্ষিত হয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসে।

নাফ ট্যুরিজম পার্কের বিষয়ে শেখ হাসিনা আগামী তিন বছরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন, যাতে করে তিনি নিজে এর উদ্বোধন করতে পারেন। তিনটি ট্যুরিজম পার্কে আরো নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়েও তিনি এসময় সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়’র (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক খায়রুল আনাম অনুষ্ঠানে সাবরং এবং নাফ ট্যুরিজম পার্কের মাষ্টার প্ল্যানের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য্য দিক উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে বালাকৃষ্ণাণ সুরেশ মাহিন্দ্র ভিডিও প্রেজেন্টেশনের সাহায্যে সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন।

সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের মাষ্টার প্ল্যান তৈরির পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস প্রদান করেন যে, আগামী ২৪ মাসের মধ্যেই এখানে পর্যটকরা পরিভ্রমণ করতে পারবেন এবং পার্কটিকে সম্পূর্ণ রুপ দিতে ৯ বছর সময় লাগবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃর্পক্ষ (বেজা) সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের বাস্তুগত ভারসাম্য সুরক্ষা এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে এই ট্যুরিজম পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সোনাদিয়ায় দেশের প্রথম ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বেজা ‘মাহিন্দ্র কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স’ এবং ‘ডেভকন কনসালটেন্টস লিমিটেড’কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত করেছে।

কক্সবাজারের আওতাধীন সাবরং এবং নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট এবং কোরিয়ার দোহওয়া (ডিওএইচডব্লিউএ) কনসালটেন্ট লিমিটেডকে পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোনাদিয়ায় ৮ হাজার ৯৬৭ একর জমির ওপর সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কটি গড়ে তোলা হচ্ছে। যার ৯০৯ একর জমিকে কাজে লাগানো হবে এবং বাদ বাকি অংশ অটুট থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী তিনটি মাষ্টার প্লানের বিশদ বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী একমাসের মধ্যে এই মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করা হবে।

নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সাবরং ট্যুরিজম পার্কের নির্মাণও তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাবরং ট্যুরিজম পার্ক কক্সবাজার জেলায় দেশের প্রথম বিশেষ পার্ক হবে এবং টেকনাফ উপজেলার সাবরং ইউনিয়নের এক হাজার ৪৭ একর ভুমি জুড়ে হবে এর অবস্থান। সাবরং ইউনিয়নটি একটি অপূর্ব পাহাড় এবং সমুদ্র সৈকত বেষ্টিত, বহুমুখী বিচিত্র এবং প্রশংসনীয় সুন্দর এলাকা।

নাফ ট্যুরিজম পার্ক যে জায়গায় গড়ে উঠছে সেটি অতীতে জালিয়ার দ্বীপ হিসেবে পরিচিত ছিল এবং এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম দ্বীপ ভিত্তিক ট্যুরিজম পার্ক। যার আয়তন ২৭১ একর। কক্সবাজার জেলার টেকানাফ উপজেলার নাফ নদীর মাঝে জেগে ওঠা ডিম্বাকৃতির দ্বীপটিতেই নাফ ট্যুরিজম পার্কের অবস্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *