দিল্লিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭, আতঙ্কে মুসলিমরা

অনলাইন ডেস্ক : সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সহিংস বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। সিএএ সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে ইতোমধ্যে ২৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি ও টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

সংঘর্ষে নিহতের মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন। আহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছে দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যম।

দিল্লির এমন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তিনি সেখানকার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। অজিত ডোভাল সিলামপুর, জাফরাবাদ, মৌজপুর, গোকুলপুরী ঘুরে এসব এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।

তবে সেখানে গিয়েও অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে ডোভালকে। তাঁর সামনেই বোরখা পরা এক তরুণী নালিশ করেন, ‘আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। পুলিশ কিছু করছে না।’

তবে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আর্জি জানিয়ে ডোভাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি পরিদর্শনে এসেছেন।

তিন দিন ধরে কার্যত জ্বলছে উত্তর-পূর্ব দিল্লি। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আগে থেকে সক্রিয় না হওয়ায় পরিস্থিতি কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। বুধবারও বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আর্জি জানান। তার পর বিকেলেই পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে হিংসা বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখলেন অজিত ডোভাল।

এ দিন উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজগঞ্জের গলি-মহল্লায় ঢুকে কথা বলেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কোথাও কোনও জটলা দেখলেই কাছে এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশ্বস্ত করে বলেছেন, পর্যাপ্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছে। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।

একটি জটলায় এক মহিলাকে তিনি বলেন, ‘সম্প্রীতির ভাব বজায় রাখুন। আমাদের একটাই দেশ। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকব। সবাই মিলেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

এর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এলাকার এক তরুণী ছাত্রী অভিযোগ করেন, ‘আমরা প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। পড়াশোনা করতে পারছি না। রাতে ঘুমোতে পারছি না।’ ডোভাল বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’ কিন্তু তরুণী তাঁকে কার্যত থামিয়ে দিয়েই বলেন, ‘পুলিশ কিছুই করছে না।’ তখন এনএসএ ডোভাল বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

একই সঙ্গে ডোভাল এ দিন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ নয়। তিনি বলেন, ‘এই জাফরাবাদেই সবচেয়ে বেশি গন্ডগোল হয়েছে। গুলি চলেছে। কিন্তু আমি এলাকায় ঘুরে দেখলাম। সব ঠিকই আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ কেউ অশান্তি চান না। তাঁরা শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশেই থাকেন। কিছু দুষ্কৃতী সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করে। তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’

দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীন। সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় প্রশ্নের মুখে সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা। ডোভাল এ দিন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন ডোভাল।সূত্র: আনন্দবাজার, এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *