বাংলাদেশের তাপমাত্রাও করোনাভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী

অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের তাপমাত্রাও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার উপযোগী। সম্প্রতি স্যোশাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছিলো বাংলাদেশের মতো উচ্চ তাপমাত্রার দেশে মারাত্মক নিউমোনিয়া রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু সেই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় বিশ্ব পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে দ্রুত। তাপমাত্রার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই। উচ্চ তাপমাত্রা আছে এমন দেশেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা ভাইরাস সর্বোচ্চ ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এর ওপরে গিয়ে আর টিকতে পারে না। অথচ পৃথিবীর কোনো দেশেই এতো তাপমাত্রা নেই।

সুতরাং গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাবে এ ভরসায় বসে থাকা যাবে না। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

ওদিকে আজ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানান যে, অতি গরমে এই ভাইরাসের বিস্তার অনেকটাই কমে যাবে বা ভাইরাস মরে যাবে। নতুন একটি সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে-এই ভাবনার ফাঁদে পড়া এড়ানো উচিত। সাধারণ ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার জীবানুগুলির মতোই এই ভাইরাস তাপমাত্রার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঠিক একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে-সেটা না-ও ঘটতে পারে।

দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী গুয়াংজুয়ের সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সমীক্ষাটি করেছেন। নভেল করোনভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে তাপমাত্রার পরিবর্তন প্রভাব ফেলবে কিনা-এটাই এই গবেষণার মূল বিষয় ছিল।

সমীক্ষা প্রতিবেদনটি গত মাসে প্রকাশিত হয়। তবে এটা নিয়ে এখনও পর্যালোচনা করা হয়নি। ওই গবেষণঅ প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছিল যে, ভাইরাসেরে আচরণের প্রক্রিয়ার ওপর তাপমাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ভাইরাসটি উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ কারণে যেসব দেশে গরম বেশি সেখানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’

এই গবেষণা বলা হয়েছে, উত্তর গোলার্ধে বসন্ত এবং গ্রীষ্মের মাস আসার সাথে সাথে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে ব্যাপক জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো আমলে না নিলে ভাইরাস সংক্রমণ হ্রাস পাবে না। এই গবেষণাটি করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারী মাসে। এটার ‘সায়েন্টিফিক রিভিউ’ এখনো চলছে।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকা সহ পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশেও তিনজনের দেহে ধরা পড়েছে এই প্রাণঘাতি ভাইরাসের উপস্থিতি। যাদেরকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জারি করেছে উচ্চ সতর্কতা। বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকার ও জনগণকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আর নয়তো পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি। এখনই হুঁশিয়ার না হলে মারা যাবে কোটি কোটি মানুষ।

চীনের বাইরে এই ভাইরাস ১৭গুন দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত এবং সচেতেন মানুষদের দেশেও করোনা ভয়াবহ আকার ধারন করছে। সেখানে আমাদের মতো অনুন্নত এবং অসচেতন দেশ যে কতোটা ঝুঁকিতে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করবে।

করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই। ফলে সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই এই ভাইরাস মোকাবিলার একমাত্র উপায়।

চীনের উহান শহর থেকে ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৯৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। মারা গেছে ১৬টি দেশের সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *