‘পেপার-টেস্ট কিট আবিষ্কার ৩০ মিনিটেই ধরা পড়বে করোনা, বাঁচবে লাখো প্রাণ’

অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে মারণ করোনাভাইরাস। এখনও এই ভাইরাসের কার্যকরি কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপসর্গ দেখা দিলেও করোনাভাইরাসের খোঁজ পেতে যথেষ্টই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসক-বিজ্ঞানীদের। কীভাবে যে শরীরের ভিতরে ঘাপটি মেরে রয়েছে করোনা তা সনাক্ত করতেই দীর্ঘদিন সময় লাগছে। যতক্ষণে বোঝা যাচ্ছে কোভিড-১৯ পজিটিভ, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অনেকটাই। রোগীর সংক্রমণও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, শরীরে করোনা বাসা বেঁধেছে কিনা সেটা এবার জানা যেতে পারে মাত্র ৩০ মিনিটেই। সেই পদ্ধতিই আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞানীরা। যদিও এই পদ্ধতি এখনও গবেষণার স্তরেই আছে এবং মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়নি, তবে বিজ্ঞানীদের দাবি নতুন পদ্ধতি খুবই কার্যকরী হবে। দ্রুত করোনা সনাক্ত করে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। ফলে বেঁচে যাবে অনেক প্রাণ।

এমআইটি’র বিজ্ঞানীরা বলছেন এই পদ্ধতি আসলে পেপার-টেস্ট। অনেকটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট-কিটের মতো। আক্রান্তের থুতু, লালা, রক্ত, মূত্র বা দেহরসের নমুনা এই টেস্ট-কিটের উপর ফেললেই ধরা পড়বে শরীরে সংক্রামক ব্যধি করোনা রয়েছে কি-না। পেপার-টেস্টের এই পদ্ধতি মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।

যে কোনও ভাইরাল সংক্রমণের ডায়াগনিসের জন্য বহু বছর ধরেই পেপার-টেস্টের এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে এমআইটি। ইবোলা,ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাস ও অন্যান্য সংক্রামিক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগের পরীক্ষায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমআইটি-র ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, ইবোলা, ডেঙ্গু, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের জন্য আলাদা আলাদা টেস্ট-কিট রয়েছে। করোনার ক্ষেত্রে একই টেস্ট-কিট ব্যবহার করা যাবে না। যেহেতু জিনের গঠনের বদল ঘটিয়ে করোনার স্ট্রেন এখন সার্স ও মার্স ভাইরাসের থেকে অনেকটাই আলাদা, তাই ওই ভাইরাল স্ট্রেনকে শনাক্ত করতে এই পেপার-টেস্টের পদ্ধতিতে অনেক বদল ঘটানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসের খোঁজ পেতে বিশেষ পেপার-টেস্টের পদ্ধতির আবিষ্কারক এমআইটি’র অধ্যাপক লি গেহরকে। তিনি বলেছেন, ‘অন্যান্য ভাইরাসের শনাক্তকরণে যখন এই পেপার-টেস্ট কাজে এসেছে, তখন আশা করাই যায় নোভেল করোনাভাইরাসের খোঁজ পেতেও এই পরীক্ষা পদ্ধতি কাজে আসবে। একবার ভাইরাস ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবডি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা যাবে রোগীর।’

কীভাবে কাজ করবে এই পেপার-টেস্ট?

এমআইটি’র গবেষকরা বলছেন, এই টেস্ট-কিটে রয়েছে এমন একটি স্ট্রিপ যা দু’রকম অ্যান্ডিবডি দিয়ে কোটিং করা। একরকম অ্যান্টিবডির সঙ্গে যুক্ত হবে বিশেষ ভাইরাল প্রোটিন। অন্য অ্যান্টিবডির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে গোল্ড ন্যানো-পার্টিকল। রোগীর নমুনা এই পার্টিকল বা উপাদানগুলোর উপর ফেলে স্ট্রিপটা একটি সলিউশনে ডোবানো হবে। যদি নমুনায় ভাইরাল প্রোটিন থাকে সেটা ওই অ্যান্টিবডির সঙ্গে যুক্ত হবে। ২০ মিনিটের মধ্যে স্ট্রিপের উপর রঙ ফুটে উঠবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পদ্ধতি সফল হলে খুব তাড়াতাড়ি করোনা সংক্রমণ ধরা পড়বে। রোগীর চিকিৎসায় বিলম্ব হবে না। এফডিএ অনুমোদন দিলেই মানুষের উপর এই টেস্ট-কিটের পরীক্ষা শুরু হবে।

সূত্র: ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *