টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে তৈরি হচ্ছে কোয়ারেন্টিন ইউনিট

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস বেশিহারে ছড়িয়ে পড়লে বড় সংখ্যায় মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে কোয়ারেন্টিন ইউনিট তৈরি করা হচ্ছে। আর এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রয়োজনে ‘এলাকা ভিত্তিক লকডাউন’ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, কভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি ‘যথেষ্ঠ’। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার মাঠের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।

‘ওখানে তারা মেরামত করবে, সাফসুতরো করবে এবং ওইটাকে পরিচালনার দায়িত্বও তাদের দেওয়া হয়েছে। ওখানে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে, যতটুকু ওখানে সম্ভব। ওখানে তো আপনি বড় বড় আইসিইউ মেশিন এখনই নিয়ে যেতে পারবেন না। কোয়ারেন্টিন করার মতো যা কিছু লাগে, সেটা আপাতত তারা রাখবে।’

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৫৮টি দেশে ২ লাখ ১৮ হাজার মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন; মৃতের সংখ্যা ৮৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।

আর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৭ জনের এ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর দিয়েছে সরকার, মৃত্যু হয়েছে একজনের।

সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যাত্রীদের ওপর জারি করা হয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। যারা বিদেশ থেকে আসবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ জারি হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিদেশফেরত কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ (জ্বর, কাশি, গলাব্যথা) থাকলে তাকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে, একে বলা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। আর যাদের মধ্যে উপসর্গ নেই, তাদের যার যার বাসায় কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে, একে বলা হচ্ছে হোম কোয়ারেন্টিন।

কিন্তু বিদেশফেরত অনেকে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে না থেকে মর্জি মাফিক ঘুরে বেড়ানোয় পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানতে বাধ্য করতে জেলায় জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা করার খবর আসছে।

ফলে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা আদৌ কার্যকর হচ্ছে কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। বিদেশফেরত বা সন্দেহভাজন সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন কেউ কেউ।

মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শিবচর এলাকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য জেলায় যতটুকু লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি, ওখানে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। ১৭ জন যে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে বেশিরভাগ অংশ ওখানকার। এ কারণে ওই এরিয়াকে ভারনাবেল, ক্রিটিক্যাল মনে করি। যদি সত্যি বেড়ে যায়, তাহলে ওই এলাকাগুলো আমরা লকডাউন করব।’

যেখান থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল, সেই চীনের হুবেই প্রদেশে এলাকাভিত্তিক চলাচল বন্ধ ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সুফল পাওয়া যায়, যাকে বলা হচ্ছে ‘লকডাউন’। ইউরোপ, আমেরিকাতেও বিভিন্ন দেশে এখন এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা এই রোগ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে উত্তম পন্থা। আমরাও যদি দেখি করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানেই আমরা লকডাউনে চলে যাব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *