করোনাভাইরাস : আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরার পর যা না করলেই নয়

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাস কতটা মারাত্মক তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে যে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়েছে, তাকে মোটামুটি ঠেকিয়ে দিয়েছে চীনারা। তাই বলে যে অবস্থা পুরো নিয়ন্ত্রণে তা বলা যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। কভিড-১৯ এমনই এক ‘রেসপাইরেটরি ইলনেস’ যা ওই ভাইরাসের কারণে দেখা দিচ্ছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। হুবেই প্রদেশ থেকে যারা গত ১৪ দিনের মধ্যে নিজের ফিরছেন তাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকার সেন্টারস্‌ ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। যদিও নিয়মগুলো চীনফেরত মার্কিনীদের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে, তবুও তা সার্বজনীন। চীন বা অন্য কোনো আক্রান্ত দেশ থেকে নিজ দেশে ফেরা যেকোনো মানুষের জন্যে এসব নিয়ম মেনে চলা খুবই জরুরি।

কোয়ারেন্টিনের বিকল্প নেই। নিজেকে সুস্থ করে তুলতে এবং আশপাশের মানুষগুলোকে নিরাপদ রাখতে আক্রান্তকে বা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা যেকোনো মানুষকে অবশ্যই কোয়ারেন্টিনে যেতে হবে। তাদের প্রতি পরামর্শ হলো-

* যদি গত ১৪ দিনের মধ্যে ফিরে থাকেন তো অবশ্যই ঘরে থাকুন। কিংবা আপনার রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে চলে যান।

* কোয়ারেন্টিনে থাকার যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন।

তাহলে যারা হুবেই ছাড়া চীনের অন্যান্য স্থান থেকে যার যার দেশে ফিরছেন তারা কি নিরাপদ? না, তাদের জন্যেও নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকেও নিরাপদ স্থানে পরবর্তী ১৪ দিন জনবিচ্ছিন্ন থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া-

* থার্মোমিটার দিয়ে প্রতিদিন একবার করে দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কাশি বেশি হচ্ছে কিনা কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কিনা।

* শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে না।

* চাকরিজীবীরা কাজে ফেরার আগে অফিস কর্তৃপক্ষকে জানান যে আপনি চীন বা কোনো আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন।

* গণপরিবহন, এমনকি ট্যাক্সি বা রাইড-শেয়ার ব্যবহার এগিয়ে চলতে হবে।

* লোকসমাগম হয় এমন স্থান পরিত্যাগ করুন। হতে পারে শপিংমল বা মুভি থিয়েটার। মানুষের কাছে থাকতে হয় এমন যেকোনো কাজ বা স্থান পরিত্যাগ করতে হবে।

* অন্যদের থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন।

* যদি স্বাস্থ্যগত অন্যান্য সমস্যার কারণে ডাক্তার দেখাতে হয়, তবে চীন বা অন্য দেশ থেকে ফেরার তথ্যটি চিকিৎসককে দিন।

* যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা জর্জরিত হন তাহলে কিছু করণীয় আছে। যেমন-

আপনার দেশের সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যবিভাগে যোগাযোগ করুন। জেনে নিন জ্বর, কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার বিষয়গুলো আপনি কিভাবে চেক করবেন। কত সময় পর পর স্বাস্থ্যবিভাগকে তা জানাতে হবে কিংবা তথ্য প্রদানে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তা জেনে নিন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতো লক্ষণগুলো যদি ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে তাহলে করণীয় কি হবে তাও জেনে নেওয়া উচিত।

কিছু জরুরি বিষয় 
যদি কেউ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসেন, সেক্ষেত্রে আপনিও আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা বুঝতে ১৪ দিনের মতো লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ১৪ দিন আপনার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন দুই বেলা করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে-

* চীন বা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরলে নিজেই তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে পরখ করুন।

* জ্বর হলে তার সঙ্গে কাশি বা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে কিনা তাও খেয়াল করুন।

* প্রতিদিনের এসব পরীক্ষার রিপোর্টগুলো লিখে ফেলুন।

* কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শমতো রিপোর্ট লিখতে থাকুন।

* যদি তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয় হবে কোয়ারেন্টিনে থাকুন। মানুষের সঙ্গে মিশবেন না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নম্বরে যোগাযোগ করুন। যদি না পারেন তো কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এ অবস্থায় আর ভ্রমণে যাবেন না। মুখ ও নাক মাস্ক বা টিস্যু দিয় ঢেকে রাখুন। কাশি হওয়ার সময় অবশ্যই মুখ টিস্যু বা রুমাল দিয়ে চেপে ধরুন। অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সাবান না থাকলে ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

* তাপমাত্রা মাপতে হবে খাওয়া, পান এবং ব্যায়ামের আধাঘণ্টা পর।

* প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রফেন বা অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ দেহের তাপমাত্রা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। কাজেই এসব ওষুধ খাওয়ার ৬ ঘণ্টা পর তাপমাত্রা মাপা উচিত।

যেভাবে তাপমাত্রা মাপবেন 
এ কাজটি সবাই জানেন। তবুও বলা যাক-

* ডিজিটাল থার্মোমিটার হলে ডিজিটাল পর্দার কাছের বোতামটি চেপে চালু করুন।

* থার্মোমিটারের সরু অংশটি জিহ্বার নিচে রাখুন। এ অবস্থায় যন্ত্রটিকে কামড়ে ধরবেন না।

* পর্দায় তাপমাত্রা দেখাবে। যদি এটা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয় তো বুঝতে হবে আপনার জ্বর আছে।

* একটা বুকলেটে ১৪ দিনের তাপমাত্রা লিখে ফেলুন।

* এবার থার্মোমিটারটিকে সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

* মনে রাখতে হবে, বাড়ির ৪ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর জ্বর মাপতে বয়স অনুযায়ী পৃথক থার্মোমিটার ব্যবহার করতে হবে।

বুকলেট তৈরি করবেন যেভাবে 
দিনে দুইবার কাজটি করতে হবে। বুকলেটে ‘০ (শূন্য)’ দিন থেকে ১৪ দিনের ঘর করে ফেলুন। এখানে শূন্য দিনটি সেই দিন যেদিন আপনি চীন বা অন্য কোনো আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন। প্রতিদিন দুই দফায় তাপমাত্রা, কাশির ধরন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য লিখে ফেলুন। এভাবে ১৪ দিনের হিসেব প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগ বা কোনো চিকিৎসককে দেখান।

সূত্র: সিডিসি, ইউএসএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *