বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি ঘরে নামাজ পড়বেন : আল্লামা তাকি উসমানি

ইসলামী ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদে জুমা ও জামাতে নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে আসলেই এভাবে একাধারে নামাজের জামাত বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ আছে কি না, এ ব্যাপারে পাকিস্তানের গণমাধ্যম দুনিয়া নিউজের পক্ষ থেকে বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত আলেম মুফতি তাকি উসমানির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। আমাদের দেশেও যেহেতু বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে, তাই পুরো সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করে দেওয়া হলো। অনুবাদ করেছেন সাআদ তাশফিন

প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম হুজুর!

উত্তর : ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। কেমন আছেন?

প্রশ্ন : আপনার দোয়ায়, আল্লাহর শোকর। ইংল্যান্ডের চার্চ থেকে ঘোষণা এসেছে যে সেখানকার সব গির্জা বন্ধ করে দেওয়া হোক। আরব আমিরাতেও মসজিদ, মন্দির ও গির্জাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপনারা ঘরে নামাজ পড়ুন। শুধু আজান হবে। আমরা এখনো এই বিষয়ে বিতর্ক করছি যে জুমার জামাত কেমন হবে? সেখানকার জায়নামাজগুলো কিভাবে পরিষ্কার করা উচিত? পাকিস্তানেও কি বহির্বিশ্বের মতো কোনো আইন জারি করা যায় না?

উত্তর : মসজিদ বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না। সেখানে জামাতও হবে। তবে যতটুকু সচেতনতা অবলম্বন করা দরকার তা করতে হবে। আমি আবেদন করেছিলাম যে সবাই সুন্নতগুলো ঘরে পড়বে। অজু ঘর থেকে করে আসবে। পাশাপাশি ইমাম সাহেবরা কিরাত সংক্ষিপ্ত করবেন। যাতে জনসমাগমের সময়টা যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত করা যায়। কিন্তু মসজিদ বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। এ ধরনের বিপদ রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকেই ঘটে আসছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে—সে ব্যাপারে ইসলামী আইনবিদদের বহু গবেষণা হয়েছে। কিন্তু কোনো মহামারির সময় মসজিদ বন্ধ করা হয়নি। বরং এ ধরনের পরিস্থিতিতে মসজিদ বন্ধ করার ব্যাপারে আমাদের পূর্বসূরি ইসলামী আইনবিদদের যেমন ফতোয়া রয়েছে, তেমনি বর্তমান বিশ্বের ইসলামী আইনবিদদেরও ফতোয়া রয়েছে। জামিয়া আজহারের এ বিষয়ে একই ফতোয়া। সবাই মসজিদে অবস্থানের সময়কে সংক্ষিপ্ত করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রশ্ন : যাঁরা বয়স্ক লোক, অসুস্থ, হৃদরোগে আক্রান্ত, তাঁরা বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তাঁদের কি ঘরে নামাজ পড়তে বলা যেতে পারে?

উত্তর : জি, অবশ্যই, যাঁরা এতে আক্রান্ত হয়ে গেছেন অথবা যাঁদের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, রোগ শনাক্ত না হলেও তাঁদের অবশ্যই ঘরে নামাজ পড়া উচিত। যাঁরা বৃদ্ধ ও অসুস্থ তাঁরাও চাইলে ঘরে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে এমন কোনো আইন জারি করা, যার দ্বারা মসজিদ বন্ধ হয়ে যাবে, তা কোনোভাবেই উচিত হবে না।

প্রশ্ন : আপনি বলেছেন, রাসুল (সা.) স্বপ্নযোগে এসে করোনা থেকে বাঁচতে নির্দেশনা দিয়েছেন, বিভিন্ন সুরা পড়তে বলেছেন, এ বিষয়গুলোকে আমরা কিভাবে দেখতে পারি?

উত্তর : আমি আগেও বলেছি, স্বপ্ন কোরআন-হাদিসের মতো দলিল নয়। তবে যেহেতু স্বপ্নটির সঙ্গে কোরআনের হাদিসের কোনো সংঘর্ষ নেই। বরং নির্দেশনা রয়েছে, তাই তা কেউ চাইলে আমল করতে পারে।

প্রশ্ন : মানে যাদের কাছে এই মেসেজটি পৌঁছাবে তারা ওই সুরাগুলো পড়ে নেবে?

উত্তর : জি। যিনি স্বপ্নটি দেখেছিলেন, আমার কাছে তাঁর আরেকটি ফোন এসেছিল, তিনি আমাকে বলেছিলেন, সুরা ফাতিহা তিনবার, সুরা ইখলাস তিনবার এবং ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল’ ৩১৩ বার পড়ে পানিতে দম করে সারা দিন খাওয়া যেতে পারে।

প্রশ্ন : জি, আমাদের কাছে এমন মেসেজও এসেছে যে রাসুল (সা.) স্বপ্নযোগে বিভিন্ন সুরা পড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

উত্তর : কেউ চাইলে সব সুরা একত্র করে পড়া যেতে পারে।

প্রশ্ন : আপনি কিছু দোয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে এই পরিস্থিতিতে এই দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া যেতে পারে। যেমন—‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালিমিন।’

উত্তর : জি, আরেকটি দোয়া হলো, ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা-ইয়াদুররু মাআসমিহি শায়উন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই ওয়া হুয়াসসামিউল আলিম’ এই দোয়া ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, কিছু স্পর্শ করার সময়, কিছু খাওয়ার সময়, কোনো মিটিংয়ে যাওয়ার সময় পড়লে ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।

প্রশ্ন : বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের সঙ্গে দেখা হলে হাত মেলানো ও কোলাকুলি করা থেকে বিরত থকার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে, এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন?

উত্তর : দেখুন হাত মেলানো (মুসাফাহা) কোনো ফরজ ওয়াজিব বিষয় নয়। বরং তা একটি মুস্তাহাব আমল, যখন তা কোনো বিপদের কারণ হবে না। এখন যেহেতু এর মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা আছে, তা থেকে বিরত থাকা যেতে পারে। আর (মুআনাকা) কোলাকুলি তো শরিয়তের দৃষ্টিতে শুধু কেউ বাইরে থেকে এলে তার সঙ্গে করা সুন্নত।

প্রশ্ন : আপনার কথা আমাদের শ্রোতারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে শুনছেন, তাঁদের অনেকে ফিডব্যাক দিয়েছেন যে আপনি যে বক্তব্যগুলো শরিয়তের আলোকে বলছেন, তা অবশ্যই পালনীয়। কিন্তু এ পরিস্থিতি ডাক্তার ও এ বিষয়ে বিশেজ্ঞদের নির্দেশনাও পালন করা উচিত। আমাদের তাদের নির্দেশনাগুলোকে অমান্য করা উচিত নয়।

উত্তর : এই বিষয়ে আমরা এর আগেও বলেছি, এই ব্যাপারে যেসব নির্দেশনা আসছে সেগুলো অবশ্যই গুরুত্বসহকারে পালন করা উচিত।

প্রশ্ন : সরকারের পক্ষ থেকে নাকি ডাক্তারদের পক্ষ থেকে?

উত্তর : জি, সরকারের পক্ষ থেকে, ডাক্তারদের পক্ষ থেকে, যাঁরা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তাঁদের পক্ষ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *