অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বের ৯টি দেশে মোট ৫৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।
যুক্তরাষ্ট্রে ৩০:
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার পর্যন্ত (৩০ মার্চ) ৩০ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই নিউইয়র্কে। নিউইয়র্কে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত প্রায় প্রতিটি পরিবারের কোনো স্বজন বা পরিচিত মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
ইতালি ২:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে এখন পর্যন্ত দুজন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ১টার দিকে দেশটির উত্তরাঞ্চল মিলানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু হয়।
এর আগে গত সপ্তাহে গোলাম মাওলা (৫৫) নামে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। ওই বাংলাদেশি ইতালির উত্তরাঞ্চলের লম্বারদিয়ায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সৌদি আরব ১:
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সৌদি আরবে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ মার্চ তিনি মদিনার আল জাহরা হাসপাতালে মারা যান। সোমবার হাসপাতাল থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের জেদ্দা কনস্যুলেটকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে জেদ্দা কনস্যুলেট উইং একটি চিঠি পাঠিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
যুক্তরাজ্য ১১:
করোনাভাইরাসে যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছে ১১ জন বাংলাদেশি। সবশেষ ২৯ মার্চ লন্ডনের এনফিল্ডের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মো. সোহেল আহমেদ (৫০) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি মারা
গত শনিবার দুপুর ২টায় লন্ডনের কিং জর্জ হাসপাতালে মারা যান আনোয়ারা বেগম চৌধুরী (৬৫) নামের এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি। একইদিন আলম আশরাফ আকন্দ (৫০) নামের আরেক বাংলাদেশি মারা যান।
এর আগে শুক্রবার ম্যানচেস্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাঈদ হোসেন জসিম (৬৫) নামে এক বাংলাদেশি। এদিন লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় মো. মনির উদ্দিন (৬০) নামের এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বুধবার মারা গেছেন হাজী ফখরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ডে বসবাস করতেন। গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় একই হাসপাতালে মারা যান খসরু মিয়া (৪৯) নামের এক ব্যক্তি।
এর আগে গত ২৩ মার্চ ওই হাসপাতালে মৃত্যু হয় টাওয়ার হ্যামলেটসের স্যাটেল স্ট্রিটের বাসিন্দা হাজী জমশেদ আলীর (৮০)।
১৬ মার্চ তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মারা যান যুক্তরাজ্যে সফররত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মাহমুদুর রহমান (৭০)। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের রেহান উদ্দিন (৬৬)।
গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন ম্যানচেস্টারে বসবাসরত ৬০ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি। তিনি পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে ইতালি থেকে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন ব্রিটেনে।
স্পেন ১:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্পেনের মাদ্রিদে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এটি স্পেনে প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু।
বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) রাজধানী মাদ্রিদে ভোর ৪টার দিকে বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বেশকিছু দিন থেকে সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। পরে পরীক্ষা করার পরে তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর থেকে নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
প্রবাসী ওই বাংলাদেশি পরিবার নিয়ে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।
বিশ্বে ইতালির পরে স্পেনেই মৃতের সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্পেনে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৩৬৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৭১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কাতার ১:
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দিলীপ দেব (৫৫) নামে এক বাংলাদেশি মারা গেছেন। সোমবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মজুল।
গত শনিবার বিকেলে কাতারের হামাদ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত দিলীপ দেবের ছেলে হৃদয় দেব সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ কাতারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। গত ১৬ মার্চ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হামাদ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
সেখানে তার শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত দিলীপ স্ত্রীসহ তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
লিবিয়া ও গাম্বিয়া ২:
করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত লিবিয়ায় একজন ও গাম্বিয়ায় একজন করে বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে তাদের বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। করোনায় মৃত্যু নিয়ে দুই দেশের সরকারের প্রকাশিত তথ্য দুই জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে ৫:
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫ জন। দেশে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে ৪৯ জনের শরীরে। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ১৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৫ জন।
সোমবার (৩০ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।
ব্রিফিংয়ে ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যাদের পরীক্ষা শেষে একজনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট ভাইরাস শনাক্ত হলো ৪৯ জনের শরীরে। তবে এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরও চারজন। এদের মধ্যে তিনজনই ষাটোর্ধ্ব।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনভাইরাস বা কোভিড-১৯ এখন পর্যন্ত (৩১ মার্চ) মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৭৭ জনে। বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬৫ জন। সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩৪ জন।