কুষ্টিয়ায় বসছে ‘পিসিআর ল্যাব’ আগামী ৩ দিনের মধ্যেই করোনা টেষ্ট করা সম্ভব হবে!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান স্বল্পতা নিয়েই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চালু হতে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অথবা সন্দেহভাজন রোগীদের শনাক্ত করার পলিমার্স চেইন রিএকশান (পিসিআর) ল্যাব। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের একটি ভবনে এই ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। এই ল্যাব চালু হলে আইইডিসিআর ও বিভাগীয় শহর গুলোর পাশাপাশি এটা হবে দেশের ১১তম পিসিআর ল্যাব।

তবে এখন পর্যন্ত এ মেশিন চালানোর জন্য কুষ্টিয়াতে একজন এমটি ল্যাব টেকনিশিয়ান রয়েছে, যাকে ঢাকা আইইডিসিআর-এর তত্বাবধানে প্রশিক্ষন দিয়ে আনা হয়েছে, বলে জানিয়েছেন জেলার চিকিৎসা কর্মকর্তারা, বলছেন ভেতর থেকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন দিয়ে আরো টেকনিশিয়ান বানানোর প্রক্রিয়ায় রযেছেন তারা।

এ সংক্রান্ত সকল তত্বাবধানে থাকবে কুষ্টিয়া মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ, জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার।

পলিমার্স চেইন রিএকশান (পিসিআর) ল্যাব কুষ্টিয়ায় স্থাপন হলে এখান জেলার পাশ্ববর্তী ৫ টি জেলার মানুষ এখান থেকে কোভিড নাইনটিন ভাইরাসের (করোনা ভাইরাস) টেষ্ট করতে পারবে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার দৈনিক কুষ্টিয়া কে বলেন ল্যাবের কাজ কালকের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর আইইডিসিআর থেকে কিছু সরঞ্জাম এখানে আসছে সেগুলো বসিয়ে এবং ল্যাব টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষন সম্পন্ন করে আগামী ৩ দিনের মধ্যেই কুষ্টিয়াতে করোনা টেষ্ট সম্ভব হবে।

কুষ্টিয়াতে পিসিআর মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ। কুষ্টিয়াতে একটি সভায় দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বিষয়টি দেখবেন আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ঢাকাতে যেয়ে তিনি এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেন।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বিষয়টিকে খুবই সময় উপযোগী বলে অভিহিত করেন।

জানা গেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি রিলেটেড বিভাগে যোগাযোগ করা হয় যেখানে এ বিষয়ে অধ্যয়ন ও ল্যাবে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয় ওখানে এ বিষয়ে পুরনো আমলের মেশিন বিষয়ক জ্ঞান ও প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়ে থাকে। নতুন ও আধুনিক এসব মেশিনের সাথে তাদের কোন সংযোগ নেই।

নাম প্রকাশ না করে জেলার একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেছেন এই টেস্টিং প্রক্রিয়া বেশ জটিল। এর জন্য এমন ল্যাব চাই যা দূষণমুক্ত, এমন রিএজেন্ট দরকার যা অন্য কিছু দ্বারা সংক্রমিত হয় নি, শেষাবধি রোগীর দেহ থেকে যে নমুনা নেয়া হয়েছে সেটাও দূষিত হয় নি এবং সেই নমুনা যেন পরীক্ষককে আক্রান্ত না করে সেটাও দেখতে হবে। প্রাইমার ও অন্যান্য রিএজেন্টের গুণগত মান ঠিক থাকতে হবে, সেগুলোর সাপ্লাইও থাকতে হবে পর্যাপ্ত। যারা পরীক্ষাটি পরিচালনা করছেন তাঁদের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

তিনি বলেন যদি ভাল ব্যবস্থাপনা না থাকে তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হবে। এই জন্য রোগীদের তাদের টেস্টের ফলাফল জানার জন্য বেশ কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। টেস্টিংএর জটিলতা যে কী পরিমাণ সেটা বোঝা যাচ্ছে যখন চীন থেকে যে সমস্ত টেস্টং কিট বিদেশে যাচ্ছে তাদের গুণগত মান সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে।

স্পেন, তুরস্ক, ফিলিপিন্স বলছে চীনে তৈরি অনেক কিটই ভুল ফলাফল দেখাচ্ছে। অন্যদিকে চীন বলছে ওই সমস্ত দেশের পরীক্ষকরা নির্দেশমত পরীক্ষা করছেন না।

ঐ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আরো বলেন মনে রাখতে হবে চিকিৎসকরা এই টেস্টিং করছেন না। এই পরীক্ষার সম্পর্ক আছে অণুজীববিদদের সাথে, ভাইরাসবিশেষজ্ঞ দের সাথে, বংশগতিবিদ, জীববিজ্ঞান ও রসায়নের অন্য বিজ্ঞানীদের সাথে। সেই বিজ্ঞানীদের কাজ হল টেকনিশিয়ান তৈরি করা, প্রশিক্ষণ দেয়া। এটি বিশাল কাজ এবং সেজন্য হয়তো সমগ্র বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়। তবে তিনি বলেন বাংলাদেশে এই বিষয়ের অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *