অনলাইন ডেস্ক : আজ মঙ্গলবার উৎসবহীন বাংলা নববর্ষ। চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৬ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হলো নতুন বছর ১৪২৭। আজ সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে।
স্বাভাবিকভাবেই সে স্বপ্ন, করোনাভাইরাস মুক্ত নতুন বিশ্ব-নতুন বালাদেশ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালি করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই আজ প্রথমবারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই।
আজ পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মাতার কথা দেশ। সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানী জুড়ে থাকার কথা মঙ্গল শোপভাযাত্রা নিয়ে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এখন চলছে করোনাকাল। মানুষের পৃথিবীতে এখন চলছে অনিশ্চিত সময়।
এর আগে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পহেলা বৈশাখের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারা দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে। এটা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এবার তাই কোনো রকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী রমণার বটমূলে হচ্ছে না ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। তবে সরকারি এবং বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে নববর্ষের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে।
এদিকে আজ বাংলা নববর্ষের দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির বা উপাসনালয়ে না গিয়ে নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করে আনুষ্ঠানিকতা পালনের আহবান জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের নির্দেশ অনুয়ায়ী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি এ অনুরোধ জানানো হয়।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাবেন।
কৃষি কাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ।
পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব উল্লেখ করে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করবার আর কুসংস্কার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণা পায় এবং জাতি হয় ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। বুকভরা তেমনি প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যমে ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি কাল আরো সোচ্চার হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মৌলবাদ ও জঙ্গি নিধনের দাবিতে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালি করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আজ নতুন বছরকে বরণ করে নেবে।