করোনার মহামারিতে সব কিছু থমকে গেলেও থেমে থাকেনি খোরশেদ আলম (দ্বিতীয় পর্ব)

ইকরামুল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি :  সব কিছু থেমে থাকলেও, থেমে থাকনা যোদ্ধারা। যুদ্ধের ময়দানের বিজয়ের আনন্দে যেন তাদের সর্বসুখ নিহিত। বিশব্যাপী ছড়িয়ে  পড়া করোনার মহামারিতে সব কিছু থমকে গেলেও, থেমে থাকেনি শার্শার যোদ্ধা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) খোরশেদ আলম। শার্শার খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের কাছে তিনি এখন প্রিয় ও পরিচিত মুখ। তিনি তার কর্মকান্ড দিয়ে জয় করে নিয়েছেন শার্শাবাসীর মন। আর শার্শাবাসীও তাকে স্থান দিয়েছেন তাদের মনের মনিকোঠায়। করোনা যুদ্ধে সবাই ঘরে ফিরে গেলেও, ফিরে যাননি খোরশেদ আলম। হারার আগে হেরে যাবার পাত্র তিনি নন। যুদ্ধের ময়দানে শুধু অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে যুদ্ধ করলেই শুধু যোদ্ধা হওয়া যায়, তেমন কোন কথা নাই। যেমন যুগে যুগে যুদ্ধের ময়দানে কবিরা তাদের বিদ্রোহী কবিতা লিখে যুদ্ধ করেছেন, শিল্পীরা তাদের গান দিয়ে যুদ্ধ করেছেন, আবার আকনির মাধ্যমে যুদ্ধ করেছেন চিত্র শিল্পীরা। ঠিক তেমনি খোরশেদ আলম যুদ্ধ করছেন মানবতা রক্ষার্থে। করোনা দূর্ভিক্ষে মানুষকে ভালো রাখতে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তার যুদ্ধ। যুদ্ধের শেষ হাসিটা হাসাই যেন তার কাছে গর্বের।
এ যোদ্ধা দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণের গত ২৪ দিনে শার্শাবাসীকে ভালো রাখার জন্য যে অর্জন উপহার দিয়েছেন, গত ২৪ দিনে তিনি ৩ হাজার কি.মি.  বিভিন্ন প্রান্ত পাড়ি দিয়ে কঠোর পরিশ্রমে মানবতা রক্ষার লড়াইয়ে বিভিন্ন অনিয়মের, দ্রব্য মূল্যের দাম বেশি রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, অতিরিক্ত  যাত্রী পরিবহন সহ নানা অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মোট ৯৬টি মামলা করেছেন। আর জরিমানা আদায় করেছেন ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।
করোনায় প্রতিদিন গাড়িতে ত্রাণ নিয়ে শার্শার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছেন, আর অসহায় মানুষকে পেলেই দিয়েছেন ত্রাণ।
নিজ উদ্যোগে রাস্তার পাগলদের খাবার দেওয়ার পাশাপাশি  ডিউটি ও অন্যান্য সময় অসহায় এবং দুস্থদের মাঝে দিয়েছেন ত্রাণ।
৫০ থেকে ১০০ টাকা জরিমানা এবং মোবাইল কোর্ট করে ত্রাণ দেওয়া দিয়েছেন (চা দোকানদার, ইজিবাইক চালক, ভ্যান চালক, স’মিলের শ্রমিক ও জোন)
ভারত থেকে আগত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করণে ছুটে চলেছেন জেলা ব্যাপী।
গণসচেতনতায় মসজিদ ও মন্দিরে পরামর্শ ও অনুরোধ জানিয়েছেন সবাইকে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, নিজ ঘরে থাকা, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে।
ত্রাণের কাজ সহ বাজার মনিটরিং পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা।
খোরশেদ আলম বলেন, জয় পরাজয় থাকবেই। তাই বলে পালিয়ে যাবো। পালিয়ে যাবার পাত্র আমি নই। জীবন যুদ্ধে হেরেছি আবার হারতে হারতে শিখেছি। যতবার পরাজিত হয়েছি, ততবার পরবর্তীতে দিগুণ মনোবল নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছি। সুতরাং জয় পরাজয়ের স্বাদ আগেই উপলব্ধি করেছি। তাই এই করোনা যুদ্ধে নিজের শেষটুকু দিয়ে লড়ে যেতে চাই। হয়তো জনসাধারণকে সচেতন করতে পারলেই, এ যুদ্ধে আমরা জয় হতে পারবো। তাই তিনি সকলকে নিজ ঘরে থাকতে অনুরোধ করেন। পাশাপাশি অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে মানা করেন। আর কেউ যদি বাহির হন, তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক, গ্লাভস পরে বের হতে বলেন। সেই সাথে সরকারি নির্দেশনা মেনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘরে থাকার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ম্যাজিস্ট্রেট হবো। আর সেই লক্ষ্যেই নিজেকে গড়েছি। পরাজিত হয়নি। সম্মুখীন হয়েছি বিভিন্ন প্রতিকূলতার। তাই বলে থেমে যায়নি। নিজের ইচ্ছা পূরণ করেছি। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যথেষ্ট সময় দিতে পারেনি নিজ পরিবার ও সন্তানদের সাথে। কারণ এ দেশও আমার মা। আর দেশের মানুষও আমার পরিবার। তাই করোনা যুদ্ধে জয় পরাজয় যেটাই থাকুক, আমি আমার দেশ মা ও তার সন্তান ছেড়ে কোথাও পালাবো না।
এ লেখা লেখার আগে, খোরশেদ আলমের সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি সময় দিতে পারেনি। বললেন, আমি খুবই ব্যবস্ত। আপনার সাথে পরে কথা হবে। কিভাবেই বা সময় দিবেন তিনি, কারণ তখনও তিনি রয়েছেন যুদ্ধের ময়দানে। মানবতা রক্ষার লড়াইয়ে।
আমাদের সাথে থাকুন পরবর্তীতে নতুন সংবাদ নিয়ে আসছি আমরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *