বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে এম.এ পাস করেও মানবেতর জীবন যাপন করছে শারিরিক প্রতিবন্ধী জাহিদুল

এবিএস রনি (যশোর): প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় ওরা মানুষের মত মানুষ হয়ে বাঁচতে চায়, আজ ডান পায়ে জোর নেই জাহিদুলের, হাঁটুর নিচ থেকে বড়ই দূর্বল। খুব কষ্ট করে কোন রকমে ওই পায়ে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন তিনি। এত কিছুর পরেও প্রতিবন্ধকতার কাছে পরাজয় মেনে নেয়নি তিনি। সব বাধাকে পেরিয়ে সমাজে হয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন। কিন্তু কোন কিছুর কাছে পরাজয় না মানা সেই তিনি আজ পরাজয় বরণ করেছেন ‘সোনার হরিণ’ নামক চাকরির কাছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে গত পাঁচ বছর যাবৎ সরকারী-বেসরকারী বহু জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেন। তবে ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি এখনও।

কোথায়ও চাকরি জোটেনি তাঁর। দীর্ঘ সময় ধরে বেকার হয়ে ঘরে পড়ে রয়েছেন। কোন আয় রোজগার না থাকায় আর্থিকভাবে দিন দিন অত্যন্ত দূর্বল হয়ে পড়েছেন। ফলে চাকরির জন্য কোথাও আবেদন করবেন এখন সেই সঙ্গতিটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। বড় ভাই ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন, সেখান থেকে প্রতিমাসে সামান্য কিছু টাকা দেন বাড়িতে। সেই টাকা  দিয়ে কোন রকমে মা ও বোনদেরকে নিয়ে কষ্টের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন।যশোর সদরের বিরামপুরের ভাটপাড়ার মৃত আকরাম মোল্যার ছেলে সংগ্রামী এই প্রতিবন্ধী যুবকের নাম জাহিদুল ইসলাম। জন্মের বেশ কিছুদিন পর জটিল অসুখে পড়ে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন।

অনেক চিকিৎসার পর সুস্থ হলেও ডান পা টি দূর্বল হয়ে যায়। পিতার মৃত্যুর পর অনেক কষ্ট ও নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর যশোরের একটি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করার পরে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পাস করেন।জাহিদুল ইসলাম জানান, আমি একজন শারিরীক প্রতিবন্ধী। বহু চেষ্টা ও চাকরির আবেদন করা সত্তে¡ও কোন চাকরি না পাইয়া দারিদ্রতার নির্মম কষাঘাতে নিষ্পেষিত হয়ে এখন আমি নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। আমি “এ” গ্রেডের মেধাবী ছাত্র ও শারিরিক প্রতিবন্ধী কোটার দাবিদার হইবার পর ও চাকরি না পাওয়ায় চরম হতাশায় ডুবে আছি। আমার জায়গা-জমি অথবা আর্থিক সচ্ছলতা না থাকা, শত অবহেলা, অভাব-অনটন, তাচ্ছিল্যের পরেও হার না মেনে প্রতিদিনিই একটি চাকরির জন্য দারে-দারে ঘুরছি।

আজকাল চাকরির আবেদন করতেই লাগে শত শত টাকা। ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের পাশাপাশি চাকরির আবেদনপত্র পাঠানোসহ আনুষঙ্গিক কাজে আরও খরচ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে আমি এরকম অনেক টাকা খরচ করেই বহু জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন চাকরি পাইনি। সফল রাষ্ট্র নায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কার্য্যক্রম হাতে নিয়ে তার অনেক কিছু পুরণও করেছেন ইতিমধ্যে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দয়া ও মানবতায় কোনমতে একটি চাকরি পেয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি এবং প্রতিবন্ধীরা কারো বোঝা নয় সেই আশায় বুক বাধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *