অনলাইন ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসী। এই ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে বিশ্বজুড়ে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত (বুধবার দিবাগত রাত ১২টা) সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩৭ লাখ ৭৮ হাজার ২৫২ মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৩২১ জনের।
এই ভাইরাসের কবলে পড়ে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও ইউরোপের দেশ ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্স।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে হানা দিয়েছে।
এই ভাইরাসের সঙ্গে বায়ু দূষণের একটি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা সেখানেই বেশি যেখানে বায়ু দূষণ প্রবল।
প্রবল বায়ু দূষণ এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞানীদের মতে, ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট যত মানুষের মত্যু হয়েছে, তার অর্ধেকই দেশটি লম্বার্ডি প্রদেশের বাসিন্দা। আর এই লম্বার্ডি ইতালির সবচেয়ে দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইউরোপের ৬৬ এলাকার ওপর চালানো একটি গবেষেণায় দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর ৭৮ শতাংশ ঘটেছে মাত্র ৫টি এলাকায়। আর এই ৫টি এলাকার প্রত্যেকটিই নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাসে ভরপুর এবং ব্যাপকভাবে দূষিত।
ফলে বিজ্ঞানীরা বায়ু দূষণের সঙ্গে করোনায় মৃত্যু হারের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন। তাদের ধারণা, প্রবল বায়ু দূষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও দুর্বল করে দেয়। বায়ু দূষণ বিশেষ করে শ্বাস কষ্ট বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা বেশি মরছে কেন? এর কারণ হিসেবে গবেষণায় তারা পেয়েছেন যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশির ভাগই অনুন্নত এলাকায় বাস করে।। সেসব এলাকায় তারা প্রবল বায়ু দূষণের মধ্যে জীবনযাপন করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় যুক্তরাজ্যে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুহার ৩.৫ ভাগ বেশি। আর পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের মৃত্যুহার বেশি ২.৫ ভাগ। আর এরা বেশির ভাগই বাস করে অপেক্ষাকৃত দূষিত এলাকায়।
এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউন চলছে। এই লকডাউনের মধ্যে সারাবিশ্বের বায়ুর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। কমেছে দূষণের মাত্রা। এই লকডাউনের মধ্যে ভারতের দিল্লি, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ও চীনের উহানে দূষণের মাত্রা অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।
গবেষকদের মতে, লকডাউনের এই সময়ে বায়ু দূষণ কমার কারণে শুধু ইউরোপে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বেঁছে গেছেন ১১ হাজার মানুষ।
বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন, যেহেতু লকডাউন প্রত্যাহারের দিকে এগোচ্ছে বিশ্ব। এখনই বায়ু দূষণ কমানোর কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়া হলে করোনাভাইরাস আবার হানা দিতে পারে। সূত্র: হার্ভার্ড টি এইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেল্থ