ভারতে ২৭ বছরের মধ্যে ভয়াবহ হানা পঙ্গপালের, ‘ঘুম হারাম তিন রাজ্যে’

অনলাইন ডেস্ক : একদিকে করোনা অন্যদিকে আম্ফানের তাণ্ডব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পঙ্গপালের হানা। চরম হুমকিতে ভারতের অর্থনীতি। এ মাসের শুরুতে রাজস্থানে প্রবেশের পর এখন মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপালের কয়েকটি ঝাঁক। এদের একটি দল দিল্লীর দিকে যাচ্ছে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

প্রায় আড়াই থেকে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পঙ্গপালের এ ঝাঁক থেকে রক্ষা পেতে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের কৃষক ও কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম। ফসল বাঁচাতে সতর্কতা অবলম্বন করছে দুই রাজ্যের সরকার। কোথাও রাসায়নিক স্প্রে কোথাও বা ধাতব শব্দ করে পঙ্গপালের হাত থেকে রেহাই পেতে চেষ্টা করছে চাষিরা। রাজস্থান থেকে ড্রোন চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।
মধ্যপ্রদেশের কর্মকর্তারা জানান, ২৭ বছরের মধ্যে বৃহত্তম পঙ্গপালের আক্রমণ হতে চলেছে এ রাজ্যে। বর্ষা না আসা পর্যন্ত এই সংকট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজস্থানের বেশ কয়েকটি জায়গায় সবজি, ফসল ও গাছ ধ্বংস করার পর পঙ্গপালের একটি ঝাঁক মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহের নির্বাচনী এলাকা বুধনিতে প্রবেশ করে। এরা রাজ্যের নিমুচ জেলা দিয়ে প্রবেশ করেছে, পরে মালওয়া নিমারের কিছু অংশ পাড়ি দিয়ে এখন ভোপালের কাছে রয়েছে।

রাজ্য কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কমল কাটিয়ার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি রাজ্যে ২.৫ থেকে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পঙ্গপালের ঝাঁক ঢুকে পড়েছে। তবে রাজস্থানের কোটা থেকে একটি দল রাজ্যে আসছে পঙ্গপাল মোকাবিলায় সহায়তা করতে।’

বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, খুব শিগগরই পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী মুগ ডালের ফসল নষ্ট করতে পারে শুধু মধ্যপ্রদেশে। ফল ও শাকসবজির বাগানগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ করবে। তাঁরা জানান, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এবং দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দিয়ে ফেললে কয়েক হাজার কোটি টাকার তুলা ও মরিচ ফসলেরও ক্ষতি হতে পারে।

রাজস্থান থেকে উত্তর প্রদেশেও পঙ্গপালের দল ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে জেলা প্রশাসন দমকল বাহিনীকে রাসায়নিক নিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ঝাঁসির জেলাপ্রশাসক অন্দ্র ভামসি সম্প্রতি এই বিষয়ে বৈঠক করেন। তিনি জানান, ‘গ্রামের মানুষদের এই পঙ্গপালের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেখতে পেলেই দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে খবর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবুজ ঘাস ও সবুজ রঙের ফসল দেখলেই পঙ্গপাল আক্রমণ করছে।’

২০১৯ সালে রাজস্থানের ১২ জেলায় পঙ্গপাল হানা দিয়ে ৬ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করে। ওই বছর ১ হাজার কোটি রুপির আর্থিক ক্ষতি হয়। এবার পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজ্যের কৃষিবিভাগ ৪৫ টি পিকআপ, ৭০ টি যান দিয়ে পরিস্থিতি মনিটরিং করছে এবং ৬০০ ট্রাক্টর দিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে কীটনাশক ছিটাচ্ছে। তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ড্রোন চেয়েছে পঙ্গপাল দমনের জন্য। রাজস্থানের অনেক এলাকা সাবাড় করে পঙ্গপালের একটি দল ছুটে চলেছে হরিয়ানার দিকে। গুজরাটের বানাসকাথা এলাকাও আক্রান্ত হয়েছে পঙ্গপালের হানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *