আর কেউ থাকল না ছোট্ট রামিমের

অনলাইন ডেস্ক: বাবা, মা ও ছোট্ট ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুর কানফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল রামিম। অনুষ্ঠানস্থলের কাছেই যানজটে রিকশায় বসে ছিল পরিবারের চারজন। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের একটি কু-লী পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তারিফুল ইসলাম রামিম। তার মুখ মন্ডলের একাংশ পুড়ে গেছে। অবশ্য রামিম এখনো জানে না তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই।

আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে রামিম বলে, ‘আমার বন্ধুর কানফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। আমাদের রিকশার আগে চার-পাঁচটা রিকশা ছিল। এর সামনে ছিল একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। হঠাৎ ওপর থেকে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার বার্স্ট হয়ে অটোরিকশার ওপর পড়ে। এতে অটোরিকশাটির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলি। পরে চোখ মেলে আব্বু-আম্মু কাউকে দেখতে পাইনি। তখন আমি রিকশা থেকে নেমে পেছনের দিকে চলে যাই।’

এসব কথা জানানোর পর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রামিম। পাশে বসে থাকা তার খালা রনিয়া আক্তার কক্ষের বাইরে এসে আমাদের সময়কে জানালেন, ‘ও এখনো জানে না তার কেউ বেঁচে নেই।’

নিহত বোনের সঙ্গে সর্বশেষ কথার স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকাল রাতে রামিম আমার কাছে পড়ছিল। সাড়ে ৮টার দিকে আপা ফোন করে বললেন, আজ একটু ১০-১৫ মিনিট আগে ছেড়ে দিস। ওর বন্ধুর দাওয়াতে যাব। ৯টার দিকে আমি ছুটি দিলাম। তাদের বাসাও কাছেই। বাসায় গিয়ে ওরা রেডি হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হলো। সাড়ে ১০টার দিকে আমার ফোনে অন্য নম্বর থেকে রামিম ফোন করে আগুন লাগার কথা জানায়। বোন সোনিয়া ইসলাম, দুলাভাই মিঠু ইসলাম ও তাদের আড়াই বছরের ছেলে সাহিরের ছবি দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। মার্চে তাদের আদরের ছোট ভাইয়ের (রামিমের মামা) বিয়ে। গতকাল রাতে (২১ ফেব্রুয়ারি) সবাই মিলে মেয়ের বাসায় গিয়ে বিয়ের দিন ধার্য করার কথা। এরই মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। নিহত মিঠু ইসলাম রাজধানীর হাতিরপুলে একটি টাইলসের দোকানে চাকরি করতেন। সোনিয়া ইসলাম গৃহিণী। লালবাগের ৩৬/১ ডুরিআঙ্গুর লেনের তিনতলা পৈতৃক বাসার দোতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন মিঠু। তিনতলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন একমাত্র বড় ভাই মো. টিটু। রনিয়া আক্তার বলেন, এ বছরই রামিম রাইফেলসে (বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ) চান্স পেয়েছে। আপা-দুলাভাই অনেক খুশি ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *