শরীরে পানি বৃদ্ধি পায় যেসব কারণে

অনলাইন ডেস্ক: বিভিন্ন কারণে মানবদেহে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। পানির পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে রোগীর শরীর ফুলে যায় এবং পেট, হাত-পা ও চোখের পাতায় পানি জমা হওয়ার ফলে ফুলে ভরাট ভরাট আকৃতি ধারণ করে। শরীরে জমা হওয়া পানির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে, রোগী বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পতিত হয়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো ধরনের উপসর্গে ভোগেন না।

তবে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে পায়ের পাতা ফুলতে থাকে এবং বিশেষ করে হাঁটুর নিচের অংশে পানি জমা হওয়ায় চামড়া টান টান ভাব ধরে বা ত্বক বেশি চকচকে হয়ে থাকে। পেট ফেঁপে যাওয়া, পেটের নাড়িভুঁড়িতে পানি জমা হওয়ার জন্য হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। যার ফলে পেটে ভুটভাট করা, অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হওয়া, পেটে বদহজম দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে পানির পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে সহজে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে, মানে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে, লিভারে অত্যধিক পানি জমা হওয়ার ফলে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে হজম ক্ষমতা কমে যাওয়া থেকে শুরু করে কারও কারও জন্ডিস দেখা দিতে পারে। ফুসফুসে অত্যধিক পানি জমা হওয়ার ফলে ফুসফুসের বায়ু ধারণক্ষমতা কমে যায়।

ফলশ্রুতিতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া এবং হাত-পায়ে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে চামড়ায় বা ত্বকে অস্বাভাবিক অনুভূতি, জ্বালা-জ্বালা ভাব, চুলকানোর মতো সমস্যাও সৃষ্টি করে থাকে। কারও কারও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘুরতে থাকে, তবে একটু সময় পরেই তা কমে যায় বা স্বাভাবিক হয়ে যায়। অনেকের স্মৃতিশক্তি কমে যায়, তার সঙ্গে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি কমে যায়। কোনো মানুষের শরীরে পানি জমা হয় অথবা শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। শরীরে পানি আসার প্রধান দুটি কারণ হার্ট এবং কিডনির অসুস্থতা। এ দুটি প্রধান কারণের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কারণ হলো হার্ট ডিজিজ। যে কোনো কারণে হার্ট দুর্বল হয়ে গেলে হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলশ্রুতিতে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত প্রবাহ স্তিমিত হওয়ায় রক্ত থেকে লবণ ও পানি বের হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং রক্ত থেকে লবণ ও সমপরিমাণ পানি রক্তনালির বাইরে জমা হতে থাকে। বিভিন্ন অঙ্গে অতিমাত্রায় পানি জমা হয়ে চাপের সৃষ্টি করে। এই চাপ বৃদ্ধিজনিত কারণে অঙ্গসমূহের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে থাকে। সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনির রক্ত প্রবাহ আনুপাতিক হারে একটু বেশিই কমে যায়। কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ায় কিডনি প্রস্রাবের মাধ্যমে লবণ ও পানি বের করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যাতে প্রস্রাবের পরিমাণও কমতে থাকে তদুপরি কিডনি রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে কিডনি

থেকে রেনিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়ে শরীরে লবণ ও পানির পরিমাণ আরও বেশি বৃদ্ধি করে শরীর ফুলে যেতে সাহায্য করে। তবে এতসব কিছুর মূল কারণ হলো হার্টের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং এটাকে কোনোভাবেই কিডনির অসুস্থতা বলা যাবে না। বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ ব্যক্তির কিডনি ফেইলুর দেখা দেয়, যার ফলে কিডনির কার্যকারিতা বা রক্ত পরিশোধনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে শরীরে লবণ ও পানি জমাহতে থাকে। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন তাদের বেলায় কিডনি ফেইলুরের ঝুঁকি অন্য সবার চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *