ইসলামী ডেস্ক: মসজিদে কুবা বা কুবা মসজিদ (আরবি:مسجد قباء) সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। হিজরতের পর মুহাম্মদ (সা.) এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। এখানে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। মসজিদটি মদিনা শরিফের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। এর দূরত্ব মসজিদে নববী থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মতো।
রাসুল (সঃ) নবুওয়াত পাওয়ার পর এটাই প্রথম মসজিদ, এমনকি ইসলামের এবং উম্মতে মোহাম্মদির প্রথম মসজিদ। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার সম্মান ও ফজিলত। এ মসজিদের আলোচনা কোরআনে করা হয়েছে এবং মসজিদ সংলগ্ন অধিবাসীদের একটি বিশেষ গুণের প্রশংসা করা হয়েছে।মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ে অত্যাধিক ফজিলত রয়েছে। মসজিদে কুবায় নামাজের ফজিলতের কথা অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- হযরত ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশ্বারোহণ করে কিংবা হেঁটে মসজিদে কুবায় আগমন করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। অন্য এক হাদিসে রয়েছে, প্রতি শনিবারে রাসুল সা. কুবায় আগমন করতেন। (বুখারি-মুসলিম)। আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি ওমরাহর সমপরিমাণ। (তিরমিজি) রাসুল সা. আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নাত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে একটি ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। (ইবনে মাজাহ) তাই তো রাসুল সা. এর যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও তাদের এই আমল অব্যাহত রয়েছে।
হজরত মোহাম্মদ (সা.) পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসের প্রথম দিন আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদিনা অভিমুখে হিজরত করেন। আর এ হিজরতের মধ্য দিয়ে মদিনা শহরকে কেন্দ্র করে ইসলাম ও কোরআনের বাণী বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। রাসূলের (সা.) হিজরতের পর সাহাবীরাও পর্যায়ক্রমে মদিনা গমন করেন। হজরত মোহাম্মদ (সা.) নিজ হাতে কুবা মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মূলত তারই তত্ত্বাবধানে মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। হজরত মোহাম্মদ (সা.) বেশ কয়েকরাত এই মসজিদে অবস্থান করেন এবং কসর নামায আদায় করেন।
‘কুবা’ একটি কূপের নাম। এই কূপকে কেন্দ্র করে যে বসতি গড়ে উঠেছে তাকে কুবা মহল্লা বলা হয়। এই যোগসূত্রে মসজিদটির নামকরণ হয় মসজিদে কুবা। নবী করিম (সা.) মদিনায় হিজরতের প্রথম দিন কুবায় অবস্থানকালে এ মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। ইতিহাসবিদরা বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন এর ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি নিজ হাতে স্থাপন করেন।
মসজিদে কুবা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ( রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। সবশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটি পুনর্নিমাণ করা হয়। এই মসজিদ নির্মাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।
চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোটো গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া ছাদের অন্য অংশে রয়েছে গম্বুজের মতো ছোটো ছোটো অনেক অবয়ব। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর। মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কারপেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন, রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা