‘করোনার জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ডেক্সামেথাসন সেবনে মৃত্যুও হতে পারে’

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অবস্থায় যাওয়া রোগীদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে ডেক্সামেথাসন নামের কম মূল্যের এবং সহজলভ্য একটি ওষুধ। গতকাল মঙ্গলবার এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞরা।

তবে ওই বিশেষজ্ঞরাই সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধ সেবন করলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই এ ওষুধ হাসপাতাল ছাড়া কিনে বাড়িতে নেওয়া যাবে না।

এর ‍আগে থেকেই বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ওষুধটি ব্যবহার করে ফল পেয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রণীত জাতীয় নির্দেশিকায় ওষুধটি ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এটি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় মূল ওষুধ নয়। সাপ্লিমেন্ট হিসেবে রোগীকে দিলে উপকার পাওয়া যায়।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির উপসর্গ গুরুতর না হলে এই ওষুধ কোনো উপকারে আসে না। আবার ডোজের সামান্য হেরফের হলে কিংবা সঠিক ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ না হলে এই ওষুধটিই মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে ডেক্সামেথাসন ওষুধটির ভুল প্রয়োগের ক্ষতিকর দিকগুলোও তুলে ধরা হয়।

প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহও এই ওষুধের সামান্য ভুল প্রয়োগের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জানিয়েছেন।

ওষুধটি শুধু হাসপাতালে থাকা করোনা সংক্রমিত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। শরীরে এই ওষুধের ওভার-রিঅ্যাকশন মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই কোনোভাবে এই ওষুধটি বাড়িতে নেওয়া যাবে না এবং নিজে নিজে ওষুধটি গ্রহণ করা যাবে না বলেও সতর্ক করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা।

ব্রিটিশ গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মার্টিন ল্যান্ড্রেই বলেন, যখন প্রযোজ্য হবে দেরি না করে হাসপাতালের রোগীদের ওষুধটি দেওয়া উচিত। কিন্তু কোনোভাবেই চিকিৎসক ছাড়া সাধারণ মানুষের এটি কিনে বাড়িতে নেওয়া বা নিজে নিজে এই ওষুধ গ্রহণ করা কোনোভাবেই উচিত না, এর পরিণাম খুবই ভয়ংকর হতে পারে।

প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, প্রথম কথা হলো এটা একটা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ। এটা নতুন কোনো ওষুধ না, পুরোনো ওষুধ, বিভিন্ন রোগে এটা ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধের ভুল প্রয়োগে ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এই ওষুধের অনেক সাইড ইফেক্ট (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) আছে। এই ব্যাপারে কিন্তু খুবই সতর্ক হতে হবে। অনেক কিছু হতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মানুষ ফুলে যায়, পুশিং সিনড্রম হয়, ডায়াবেটিস হতে পারে, প্রেসার হতে পারে, আলসার হতে পারে, হাড্ডি ক্ষয় হতে পারে, হার্টে সমস্যা হতে পারে, কিডনি প্রবলেম হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ গ্রহণ না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এ ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। ডাক্তার যদি মনে করে কোনো রোগীকে এই ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে তবে তার ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে। ডেক্সামেথাসন এটাই। এটা কিন্তু করোনার মূল ওষুধ না, এটা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দিলে উপকার হয়।

প্রেসক্রিমপশন ছাড়া এ ওষুধ কেউ যেন ইচ্ছেমতো বিক্রি না করে সে বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এটা একটা ইমার্জেন্সি ড্রাগ, লাইফ সেভিং ড্রাগ, এটা ঠিক। আমিও কিছু কিছু রোগীকে দিয়েছি। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপকার হয়েছে। উপকার হয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে, রোগীরা যেন ইচ্ছেমতো দোকান থেকে, ফার্মেসি থেকে কিনে না গ্রহণ করেন। এটা সহজলভ্য ওষুধ।

রোগীদের ক্ষেত্রে আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেরা খাবেন না, ফার্মাসিস্ট যারা ওষুধ বিক্রি করেন তাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন কোনোক্রমে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ বিক্রি না করেন এবং রোগীরা নিজেরা কিনে খাবেন না। কারণ মিসইউজ (ভুল প্রয়োগ) হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি।সূত্র:কালেরকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *