অনলাইন ডেস্ক : সরকারি খরচে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মহামারি করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে! নমুনা পরীক্ষার জন্য সরকার নির্ধারিত অংকের টাকা ফি-বাবদ গুনতে হবে। ইতোমধ্যে করোনা পরীক্ষার জন্য একটি ফি চালুর ব্যবস্থা (অর্থ বিভাগের সম্মতি-সাপেক্ষে) অনুমোদনের প্রস্তাব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল অনুবিভাগ থেকে পেশ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ফি ধারণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ব্যয়বহুল এ পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করার ফলে পরীক্ষাটির অনেক অপব্যবহার হচ্ছে। এই অপব্যবহার রোধে একটি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
মহামারি করোনাভাইরাস শনাক্তে চলতি বছরের গত ২১ জানুয়ারি থেকে সরকারিভাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। শুরুর দিকে শুধু একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা করা হতো। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে সরকারি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। বর্তমানে ৬৬টি সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।
গতকাল ২৬ জুন পর্যন্ত সারাদেশের ল্যাবরেটরিতে ছয় লাখ ৯৬ হাজার ৯৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষার সিংহভাগই হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নমুনা পরীক্ষার জন্য তিন হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সরকারিভাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরীক্ষার ফলে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে নমুনা পরীক্ষার অপব্যবহার হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ৩০ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- করোনা সংক্রমণ যেহেতু ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ ঢাকার আশপাশের বড় শহরগুলোতে বেশি, সেহেতু এসব সিটি করপোরেশন এলাকায় কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, ট্রাকিং, আইসোলেশন ও কেস ম্যানেজমেন্টের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ সিটি করপোরেশন, পুলিশ, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধি করে কমিউনিটি ট্রেসিং ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা পরীক্ষা বর্তমানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সম্পন্ন হচ্ছে, ফলে ব্যয়বহুল পরীক্ষাটির অনেক অপব্যবহার হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পরীক্ষাটির জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করে চালু করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শিশু টিকাদান অনেক কমে গেছে। টিকাদান কর্মসূচির এ হার পূর্বের ন্যায় প্রায় শতভাগ অর্জনে জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করতেও নির্দেশনায় বলা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করে নতুন পর্ষদ গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রেরণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা এবং করোনা নিয়ন্ত্রণে জোনভিত্তিক কঠোর লকডাউন পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া করোনা পরীক্ষার জন্য একটা নির্ধারিত ফি চালুর বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতি-সাপেক্ষে অনুমোদনের প্রস্তাব হাসপাতাল অনুবিভাগ থেকে পেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য লাইন ডিরেক্টর, এমএনসিএইচকে বলা হয়েছে। রেডক্রস সোসাইটির পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের প্রস্তাব দাখিলের জন্য অতিরিক্ত সচিব, হাসপাতালকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।সূত্র: জাগো নিউজ