করোনাভাইরাস : অনুমতি মিলল অ্যান্টিবডি টেস্টের

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীদের শরীরে এই ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না তা দেখার জন্য বিশ্বের কোনও কোনও দেশে চলছে অ্যান্টিবডি টেস্ট। যদিও এখন পর্যন্ত গবেষণা ও পরীক্ষামূলক ব্যবহার ছাড়া এই পরীক্ষার অনুমোদন দেয়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা কোনও দেশ।

রোগ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার কাজে লাগানোর জন্য গবেষণার অংশ হিসেবেই চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ যেসব দেশে সংক্রমণের হার খুব বেশি ছিল সেখানেই অ্যান্টিবডি টেস্ট ব্যবহৃত হয়েছে সংক্রমণের মাত্রা নিরূপণে। প্রতিবেশি দেশ ভারতেও অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশও শুরু করেছে এই পরীক্ষা। বিশেষ করে পরীক্ষামূলকভাবে যাদের প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে তাদের জন্য এই অ্যান্টিবডি টেস্ট অপরিহার্য।
গত ২৪ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর গবেষণা ও পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দিয়েছে। একই সঙ্গে এই পরীক্ষার কিট আমদানির অনুমতিও দিয়েছে অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদিত মান অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। এফডিএ অনুমোদিত কিটের ন্যূনতম সেনসিটিভিটি ৯৩.৮ ও স্পেসিফিসিটি ৯৫.৬ শতাংশ। শনিবার নাগাদ সাড়ে তিন হাজার কিট ঢাকায় এসে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।

গত ২১ জুন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের টেকনিক্যাল কমিটির সভায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ন্যূনতম সেনসিটিভিটি ৯০ শতাংশ ও স্পেসিফিসিটি ৯৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। অ্যান্টিবডির পাশাপাশি অ্যান্টিজেন টেস্টেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দেশে গবেষণা ও পরীক্ষামূলক কাজে অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’

যদিও করোনা মোকাবেলায় তৈরি করা জাতীয় গাইডলাইনে আগেই অ্যান্টিবডি টেস্টের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং এখনো মাঝেমধ্যেই করছেন দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নিজেরা একটি অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট উদ্ভাবন করেছে। এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও এটা নিয়ে কৌতূহল দেখা দেয়। অনুমতির নানা প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর পরীক্ষা করে পর্যাপ্ত মান না থাকায় সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ওই কিট আপাতত অনুমোদন দেয়নি।

অন্যদিকে চলমান আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে আগ্রহী সবার পরীক্ষা করতে সক্ষম না হওয়ায় সরকার সহজ ও গ্রহণযোগ্য অন্য পদ্ধতি অবলম্বনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এছাড়া দেশে আগে থেকেই যক্ষ্মা নির্ণয়ে ব্যবহৃত ভিন্ন ধরনের আরটি-পিসিআর মেশিন বা জিন এক্সপার্ট ব্যবহার নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

সংক্রমণের ১০০ দিন পার করার পর দেশে মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি কী পর্যায়ে তা দেখার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্টের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এখনই দেশে অ্যান্টিবডি টেস্ট সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া জরুরি। আবার কেউ বলছেন, কোনওভাবেই এই পরীক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করা ঠিক হবে না। সেটা করলে বিপদ আরও বাড়বে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও অ্যান্টিবডি টেস্ট সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। এটি কেবলই গবেষণা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক কাজে। এর পাশাপাশি সরকার এর ব্যাপ্তি আরও বাড়িয়ে বিভিন্ন পেশার লোকদের ও ক্লাস্টারে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালুর ব্যাপারে অনেকটা এগিয়েছে। এটা যত দ্রুত করা যাবে ততোই রোগের বিস্তার কোন পর্যায়ে আছে তা পর্যবেক্ষণ সহজ হবে।’

তিনি বলছেন, বিদেশি কিটের খরচ অনেক বেশি। দেশে গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিটের মান উন্নয়ন করা গেলে তা আরও সহজ ও ন্যূনতম খরচে পাওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির মহাসচিব ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে যাদের প্লাজমা থেরাপি দিচ্ছি তাদের আগে অ্যান্টিবডি চেস্ট করে নিচ্ছি। ঢাকা মেডিকেল ছাড়াও আরও যেসব প্রতিষ্ঠানে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে সেখানেও এটা ব্যবহার হচ্ছে। তবে এর বাইরে ঢালাওভাবে এটা উন্মুক্ত করা হলে বিপদ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেদিকে নজর রেখেই কোথাও এটা উন্মুক্ত করা হয়নি।’

কিটের মান বিষয়ে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডে ব্যবহার করা অ্যান্টিবডি কিটের সেনসিটিভিটিও ১০০ শতাংশ ও স্পেসিফিসিটি ৯৯.৮ শতাংশ। ব্রিটেনের কিটের সেনসিটিভিটিও ১০০ শতাংশ ও স্পেসিফিসিটি ৯৮.৭ শতাংশ। বাংলাদেশে গণস্বাস্ব্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের সেনসিটিভিটি ৭০ শতাংশের নিচে বলে সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর গত ২৫ জুন এক চিঠির মাধ্যমে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ওই চিঠিতেই মানোন্নয়ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সরকারের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে কিছু অ্যান্টিবডি কিট দেশে এনেছেন কেউ কেউ, যা প্লাজমা থেরাপির জন্য ব্যবহার করা হয় বলে জানায় একাধিক সূত্র।

বাংলাদেশ মেডিকেল ইক্যুইপমেন্টস আমদানিকারক সোসাইটির মহাসচিব মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার দেরিতে হলেও অ্যান্টিবডি কিট আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। সে অনুসারে আমরা আমদানি শুরু করে দিয়েছি। ইতালি থেকে গতকাল পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার কিট এসেছে। এ ক্ষেত্রে এফডিএ অনুমোদিত মান ফলো করা হচ্ছে।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *