এই রোগ করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর কাজাখাস্তানে ছড়িয়ে পড়া

অনলাইন ডেস্ক : কাজাখাস্তানে ছড়িয়ে পড়া এক ‘অজানা নিউমোনিয়া’ রোগের ব্যাপারে সেখানকার চীনা দূতাবাস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এটি কোভিড-১৯ এর চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স চীনা দূতাবাসের একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে বলছে, কাজাখাস্তানের আটিরাউ, আকটোবে এবং শাইমকেন্ট শহরে জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে এই ‘অজানা নিউমোনিয়া’ ছড়াতে শুরু করে।

চীনা দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে কাজাখস্তানে নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ১,৭৭২ জন। এর মধ্যে কেবল জুন মাসেই মারা গেছে ৬২৮ জন।

এতে বলা হয়, “এই নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার করোনাভাইরাসের কারণে হওয়া নিউমোনিয়ার চেয়ে অনেক বেশি।”

রয়টার্স জানাচ্ছে, এই নিউমোনিয়া কি করোনাভাইরাসেরই কারণেই হচ্ছে নাকি এটি একেবারে ভিন্ন ধরণের কোনও করোনাভাইরাস, সেটি এখনও ঠিক পরিষ্কার নয়।

কাজাখাস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন একটি তুলনামূলক সমীক্ষা চালাচ্ছে, কিন্তু কোনও উপসংহারে তারা এখনও পৌঁছাতে পারেনি।

কাজাখাস্তানের একটি সরকারি বার্তা সংস্থা কাজ-ইনফর্মে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, জুন মাসে সেখানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২.২ শতাংশ বেশি।

কাজাখাস্তানে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সরকারি হিসেবে মারা গেছে ২৬৪ জন।

বৃহস্পতিবার সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ১,৯৬২ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

এই রহস্যজনক প্রাণঘাতী নিউমোনিয়া নিয়ে চীনের সরকারি গ্লোবাল টাইমস পত্রিকাতেও খবর বেরিয়েছে।

এতে বলা হয়, কাজাখাস্তানের চীনা দূতাবাস সেখানে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের এই নিউমোনিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর উল্লেখ করে চীনা দূতাবাস বলেছে, এই নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার কোভিড-১৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, চীনা দূতাবাসের এই হুঁশিয়ারির ব্যাপারে কাজাখাস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কোনও জবাব দেয়নি।

কিছু চীনা বিশেষজ্ঞ এই নিউমোনিয়া যাতে চীনে ছড়াতে না পারে সেজন্যে এখনই ব্যবস্থা নিতে বলছেন। চীনের উত্তর-পশ্চিমের শিনজিয়াং প্রদেশের সঙ্গে কাজাখাস্তানের সীমান্ত রয়েছে।

কাজাখস্তানের সরকারি বার্তা সংস্থা কাজ-ইনফর্মে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, এই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চেয়ে দুই হতে তিনগুণ বেশি।

কাজাখাস্তানের এই ‘রহস্যজনক নিউমোনিয়া’ নিয়ে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।

‘কাজাখাস্তানে অজানা নিউমোনিয়া’ হ্যাশট্যাগের পোস্টগুলো চীনর সাইনা-ওয়েইবু সাইটে ৩৭ কোটি বারের বেশি পড়া হয়েছে।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
কাজাখাস্তানের সরকার যেভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে।

ক্রমবর্ধমান জন অসন্তোষের মুখে সরকার বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, আগামী ১৩ জুলাই কাজাখাস্তানে সরকারিভাবে ‘শোক দিবস’ পালন করা হবে কোভিড-১৯ রোগে মারা যাওয়া মানুষদের স্মরণে।

প্রেসিডেন্ট কাসিম জমার্ট টোকায়েভ টেলিভিশনে জাতির সামনে দেওয়া ভাষণে একথা ঘোষণা করেন।

সরকারি পত্রিকা আস্টানা টাইমস জানাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে স্বীকার করেছেন যে, কাজাখস্তানে শুরুতে লকডাউনের কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে আসলেও দ্বিতীয় দফায় আবার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এজন্যে তিনি দোষারোপ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তাদের এবং বিভিন্ন শহরের মেয়রদের।

এই করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই গত ৬ জুলাই রাজধানী নুর-সুলতানে যেভাবে আতশবাজি পুড়িয়ে উ‌ৎসব করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

কাজাখাস্তানের রাজধানীর নতুন নামকরণ করা হয় সাবেক প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভের নামে। ৬ জুলাই তার জন্মবার্ষিকী প্রতিবছর ধুমধাম করে পালন করা হয়। এ বছর ছিল তার ৮০তম জন্মদিন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর আগে খবর বেরিয়েছিল যে নুরসুলতান নাজারবায়েভ নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

এরকম ধুমধামের সঙ্গে তার জন্মদিন পালন সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে কায়রাত জোলডিবায়ুলাই নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “মানুষ যখন মৃত্যুশোক করছে, তখন এরকম আতশবাজি পোড়ানো জনগণের সঙ্গে নির্মম পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। একটা পুরো জাতির দুঃখের চেয়ে যেন একজন ব্যক্তির মনভালো রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *