অনলাইন ডেস্ক : দেশে আর তিন সপ্তাহের মধ্যেই পালিত হবে ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে যাতে কোনো ধরনের পশুর হাট বসানো না হয় সে জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছে কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এত দিন ধরে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে যারা গরু লালন-পালন করেছেন, তারা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।
পশুর হাট বসালে একদিকে সংক্রমণের ঝুঁকি, আবার হাট না বসালে আর্থিক ক্ষতি- এ দুইয়ের টানাপড়েন।
মুন্সীগঞ্জের আনোয়ার হোসেন প্রতিবছর কোরবানির আগে পাঁচ থেকে সাতটি গরু নিয়ে ঢাকার হাটে বিক্রি করতে আসেন। কিন্তু এবার এখনো বুঝতে পারছেন না কী হবে। গরু নিয়ে ঢাকায় হাটে বিক্রি করতে না পারলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের হাটে গরু বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়।
জাতীয় পরামর্শক কমিটি বলছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সংক্রমণের মাত্রা একই রকম আছে। বাড়ছেও না, আবার কমছেও না।
এ অবস্থা বজায় থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে সংক্রমণের হার নিচের দিকে নেমে আসতে পারে বলে মনে করছে পরামর্শক কমিটি। কিন্তু সে সম্ভাবনা নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে যদি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে কোরবানির পশুর হাট বসে।
জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ বলেন, চারটি শহরে যাতে কোনোভাবেই পশুর হাট বসতে না দেওয়া হয়, সে জন্য তাঁরা সুপারিশ করেছেন।
অধ্যাপক শহিদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে যে চারটি জায়গায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। এই চারটি জায়গায় যদি এ বছর হাট না বসে তাহলে আমাদের সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি কমে যাবে।’
অধ্যাপক শহিদুল্লাহ বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরের বাইরে পশুর হাট বসলেও সেখানে কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে চলতে সবাইকে বাধ্য করা উচিত।
তিনি বলেন, ‘খোলা ময়দানে দূরে-দূরে বেপারিদের বসতে হবে। একটা গেট থাকতে হবে ঢোকার জন্য, আরেকটি গেট থাকতে হবে শুধু বের হওয়ার জন্য। ফেসমাস্ক বাধ্যতামূলক। এমন সিস্টেম করতে হবে, যাতে কেউ ফেসমাস্ক ছাড়া ঢুকতে না পারে।’
যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি তারা যাতে পশুর হাটে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক শহিদুল্লাহ।
ঢাকাসহ যে চারটি শহরের ক্ষেত্রে পরামর্শক কমিটি আপত্তি জানাচ্ছে, সেসব জায়গায় হাট বসানোর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশনগুলো, যেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।
এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, জাতীয় কমিটির পরামর্শ সম্পর্কে তিনি এখনো কিছু জানেন না। তবে মহামারির কথা চিন্তা করে এমনিতেই হাট সীমিত করার পক্ষে। বলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
তিন বলেন, ‘আমরাও হাট না বসানোকে উৎসাহিত করছি। বিকল্প হিসেবে অনলাইনে কেনা-বেচাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’
বাংলাদেশে গত প্রায় দেড় মাস ধরে দেখা যাচ্ছে যে যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২২ থেকে ২৩ শতাংশের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, কোরবানির পশুর হাট নিয়ে তাঁদের পরামর্শ যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সংক্রমণের মাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটি বলা মুশকিল। – বিবিসি বাংলা