অনলাইন ডেস্ক: পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতের বৈমানিক অভিনন্দনকে আজ ছেড়ে দিতে পারে পাকিস্তান। গতকাল এ ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, শান্তিপ্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যেতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের এ পদক্ষেপের ভিন্ন অর্থ দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, জেনেভা কনভেনশন অনুসারে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে। এতে সমঝোতা বা অন্য কোনো বিষয় নেই।
পাকিস্তানের ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দিনের সামরিক উত্তেজনার পর কাল বুধবার সেই উত্তেজনা কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভারতের বৈমানিককে আজ মুক্তি দেওয়ার কথা বলেছেন। এতে তিনি সব দল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছেন। এ ছাড়া ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার কারণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সূত্রে ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তান সংসদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে যৌথ সেশনে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। সেই অধিবেশনেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার ভারতের সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এয়ার ভাইস মার্শাল আরজিকে কাপুর দাবি করেছেন, ‘জেনেভা কনভেনশন অনুসারে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) পড়ে যাওয়ার পর পাকিস্তানের হেফাজতে থাকা ভারতের উইং কমান্ডার পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণায় আমরা খুশি। আমরা তাঁকে ফিরে পাব জেনে অত্যন্ত খুশি। আমরা এটাকে শুধু জেনেভা কনভেনশনের চুক্তি বাস্তবায়ন হিসেবেই দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যা করতে চেয়েছিলাম, তা করেছি। দেখানোর জন্য আমাদের কাছে প্রমাণও আছে। এসব দেখানোর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গতকালই আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে বলতে চেয়েছিলাম। আমরা শান্তি চাই। আমাদের কাছে একজন পাইলট আছেন। তাঁকে আমরা কাল মুক্তি দিয়ে দেব।’
এনডিটিভির খবর, ভারতের সরকারি সূত্র বলছে, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, তারা পাইলটকে ফেরত চায়। সমঝোতা করার প্রক্রিয়া অভিপ্রায় না থাকায় কূটনৈতিক চ্যানেল দিয়েও বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। এর আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে এ–সংক্রান্ত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল এয়ার ভাইস মার্শাল আরজিকে কাপুর বলেন, ‘একবার অভিনন্দন ভালোভাবে ফিরে আসুক, তারপর পাকিস্তান এবং ইমরান খানের বক্তব্যের জবাব দেব আমরা।’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে উৎসাহ দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। পাকিস্তান জঙ্গি দমনে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তার প্রমাণ সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে ভারত। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দুই দেশের কাছ থেকেই কিছুটা সুসংবাদ পেয়েছি আমরা। প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র চায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমে যাক।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, পাইলটকে মুক্তি দিলে যদি উত্তেজনা প্রশমিত হয় তাহলে পাকিস্তান সেটা করতে চায়।
ইমরান খান বলেছেন, ‘আমি বুধবার রাতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম (কিন্তু ব্যর্থ হই)। তাঁকে বলতে চেয়েছিলাম আমরা (পাকিস্তান) কোনো ধরনের অস্থিরতা চাই না।’
শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে চান ইমরান খান। মোদির সঙ্গে কথা বলে তিনি (ইমরান) শান্তির প্রস্তাব দিতে চান।
তবে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নেওয়া পর্যন্ত কথা বলতে রাজি নন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৪২ জন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে বলে ভারতের দাবি। এর জবাব দিতেই গত মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে অভিযান চালায় ভারত। ভারতের ভাষ্য অনুযায়ী ওই অভিযানে ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়। তবে ভারতের দাবি নাকচ করে আসছে পাকিস্তান। এরপর মঙ্গলবার দিনের প্রথম দিক থেকে বুধবার পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে পরস্পরের দাবি অনুযায়ী, ভারতের দুটি ও পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়। এর মধ্যে অভিনন্দন নামে একজন ভারতীয় পাইলট পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক হন। যা নিয়ে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে কথা–ছোড়াছুড়ি হচ্ছে।
জইশ–ই–মুহাম্মদ নেতা পাকিস্তানেই
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জইশ–ই–মুহাম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের অস্তিত্ব সে দেশে রয়েছে বলে স্বীকার করে নেওয়াকে কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছে ভারত। ইসলামাবাদ আজ স্বীকার করেছে, পাকিস্তানেই আছেন মাসুদ আজহার। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাকিস্তান বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে দাবি ভারতের। পাকিস্তান বলেছে, অসুস্থ মাসুদ আজহার বাড়িতেই আছেন। ভারত তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ দিলে মাসুদকে আদালতে পেশ করা হবে।
পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘের কাছে নতুন প্রস্তাব এনেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মধ্যে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী তিনটি দেশ বুধবার ওই প্রস্তাব আনে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাঁকে বৈশ্বিক জঙ্গি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলে তাঁর ওপর ভ্রমণ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা বা অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা কমিটি ১০ দিনের মধ্যে ওই প্রস্তাব বিবেচনা করবে। এ নিয়ে গত এক দশকে চতুর্থবারের মতো মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রস্তাব আনা হচ্ছে। ২০০৯ সালে ভারত তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রস্তাব এনেছিল। এর আগে ২০১৬ সালে আজহার মাসুদের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘের কাছে ভারতের দেওয়া প্রস্তাবটিতে ভেটো দিয়েছিল পাকিস্তান–ঘনিষ্ঠ চীন।