কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নির্মিত “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল” উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল” উদ্বোধন হয়েছে সেই সাথে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের আর্থিক সহযোগিতায় নির্মিত এই “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল” আনুষ্ঠানিকভাবে ফলক উম্মোচন করে “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল” এর উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে গতকাল রবিবার সকালে সরকারী কলেজের সম্মুখে স্কুল হেলথ ক্লিনিকের পূর্ব পাশে স্থাপিত “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল”এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থেকে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সাংসদ আ,ক,ম সারওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাংসদ ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জজ, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আসগর আলী। বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া আইনজীবি সমিতির সভাপতি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডাঃ এস.এম মোস্তানজিদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার হাজী রফিকুল ইসলাম টুকু, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগ জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ হাসান মেহেদী প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম বলেন- কুষ্টিয়াতে জাতির জনকের একটি পুর্নাঙ্গ ম্যুরাল নির্মিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল তাই জননেতা মাহবুবউল আলম হানিফের অনুপ্রেরনায় আমি এটি নির্মান করার শক্তি ও সাহস পেয়েছি। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতায় এটা করা সহজ হয়েছে। এটি পুর্নাঙ্গ নির্মাণ কাজ শেষে এখানে একটি সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, যে কোন কাজ করতে গেলে অনেক ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে তাই সকলের সহযোগিতামুলক পরামর্শ কামনা করছি। তিনি বলেন, ৪২শতক জমির উপর নির্মিত ম্যুরালে প্রস্থ ১৫ ফুট, উচ্চতা ২৫ফুট, বেদিসহ উচ্চতা ৩৪ফুট। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ৯৭লক্ষ টাকা। হাজী রবিউল ইসলাম বলেন-আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন এই “বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল” নির্মাণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন- স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় ছিল দীর্ঘ ত্যাগ ও তিতিক্ষার ফসল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন স্বাধীনতার জন্য। জাতির জনককে এই মাসে নিষ্ঠুরভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। শুধু কি তাই ? বিতর্কিত করা হয়েছিল। হানিফ বলেন- কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সামনের এই জায়গাটি কুষ্টিয়াবাসীর জন্য ঐতিহ্যপুর্ন। দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর পরিবেশে জাতির জনকের ম্যুরাল নির্মিত হওয়ায় এখানকার পরিবেশ সুন্দর হবে। তবে পবিত্র এই স্থানটিকে কলুষিত এবং নোংরা করতে আসলে তাদের ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর নজদারী করতে হবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এলাকাকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ হিসেবে ঘোষনা দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংসদ আ,ক,ম সরওয়ার জাহান বাদশা বলেন, জননেতা মাহবুবউল আলম হানিফের রুচির প্রশংসা করতে হয়। হানিফের প্রতিটি কাজেই রুচি সম্মত। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল অনেক মার্জিত হবে এখানকার পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক আবহ অনেক উজ্জলতর হবে। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এত বড় ও বৃহৎ উদ্যোগ গ্রহনের জন্য ধন্যবাদ জানান। কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাংসদ ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জজ বলেন- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০৪১ সাল হবে বাংলাদেশ উন্নত দেশ। তিনি বলেন- বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে আসলে তাকে ২টি আদর্শের উপর ভিত্তি করতে হবে এর মধ্যে একটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অপরটি হলো মুক্তিযুদ্ধ। এর বাইরে কেউ রাজনীতি করতে আসলে তারা আস্তাকুড়ে পড়বে। তিনি কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল নির্মানের ঘটনাটি ইতিহাসের স্বাক্ষর হিসেবে উলে¬খ করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন- একটি প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল। আজ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নতুন প্রজম্মকে শক্তি ও সাহস যোগাবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তারা আজ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দেখে শক্তি অর্জন করতে পারবো। আর সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশলি শক্তিকে প্রতিরোধ করে এগিয়ে যেতে পারবো। পুলিশ সুপার এস.এম তানভীর আরাফাত বলেন- বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল একটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। সেখানে কোন রকমের অপবিত্র ও অসামাজিক কার্যকলাপ যাতে না হতে পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, জননেতা মাহবুলউল আলম হানিফ অসম্ভবকে সম্ভব করেন খুবই সহজ ভাষায়। তিনি প্রতিটি বিষয়ে সাংঘাতিক আন্তরিক। আমাদের বঙ্গবন্ধুকে মনে ও প্রানে ধারন করতে হবে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদরউদ্দিন খান বলেন- ৫০ বছরে কুষ্টিয়ায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। জননেতা হানিফের আন্তরিকতায় কুষ্টিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জেলার মানুষেরা এখন উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন। তিনি আরো বলেন- কুষ্টিয়ার এই ম্যুরালটি সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হবে বলে আশা রাখি। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এত সুন্দর একটি উদ্যোগ নেয়ায় অভিনন্দন জানান। সাধারন সম্পাদক আসগর আলী বলেন- যৌবনের বড় একটি সময় পার করেছি এই সরকারী কলেজ প্রাঙ্গনে। এখানে বহু স্মৃতি এখন মনে ও প্রানে ভাসে। তিনি বলেন- আওয়ামীলীগকে আজ চাটুকদারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আত্মরক্ষা নয় আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে জাতির জন্য এই কাজটি গুরুত্ব হয়ে পড়েছে। শহর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন- সুন্দর একটি পরিবেশে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপন ছিল সময়ের দাবী। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় তা সম্পন্ন হতে পারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী উপ-সচিব মুন্সী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। মুর্যাল উদ্বোধনের আগে প্রধান অতিথি মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনা মো. রাশেদের মৃত্যুর বিষয়টি অত্যন্ত দু:খজনক। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আ্ইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান করবে সরকার। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ আরো বলেন, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি একদিনের নয়। তবে শেখ হাসিনার সরকার স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে বিএনপি সে অভিযানের বিরুদ্ধে কথা বলে প্রকারন্তরে এই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে হানিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন- মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা মন্ত্রীই দিতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশর পররাষ্ট্রনীতি হলো, প্রতিবেশিসহ সব রাষ্ট্ সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *