ভোট শুরু ১১ এপ্রিল, ফল ২৩ মে

অনলাইন ডেস্ক: ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে আগামী ১১ এপ্রিল। এরপর আরও ছয় ধাপে এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে হবে এবারের নির্বাচন। মোট সাত ধাপে নির্বাচন হওয়ার পর আগামী ২৩ মে ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে। দেশটির নির্বাচন কমিশন আজ রোববার বিকেলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে।

এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসসহ বিরোধীরা মোদি শাসনের অবসানে কোমর বেঁধে নেমেছে। দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ ও ওডিশা রাজ্যে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সুনীল অরোরা আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। সিইসি জানান, প্রায় ৯০ কোটি ভোটার লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেবেন। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় কর্মকর্তারা বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের একটি দল এ জন্য বিভিন্ন রাজ্যের নানা এলাকায় সফর করা শুরু করে দিয়েছে।

সিইসি সুনীল অরোরা বলেন, ‘আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছি। ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ ঠিক করার আগে বিভিন্ন পরীক্ষা ও উৎসবের সময়সূচির প্রতিও লক্ষ্য রেখেছি আমরা।’ তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে কোনো ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নেওয়া হবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবারের লোকসভা নির্বাচনে মোট ১০ লাখ ভোটকেন্দ্র থাকবে। গতবারের চেয়ে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। প্রথমবারের মতো ভোট দেবে প্রায় ৮ কোটিরও বেশি ভোটার।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এপ্রিল ও মে মাসের সাতটি দিনে সাত দফায় লোকসভার মোট ৫৪৩টি আসনের ভোটগ্রহণ হবে। এই তারিখগুলো হলো—১১ এপ্রিল, ১৮ এপ্রিল, ২৩ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল, ৬ মে, ১২ মে ও ১৯ মে। আর ২৩ মে ফল ঘোষণা করা হবে।

বর্তমান লোকসভার মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৩ জুন। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে জয়ী হতে হবে ২৭২টি আসনে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ২৮২টি আসনে জয় পেয়েছিল। সব মিলিয়ে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছিল ৩৩৬টি আসন। আর দুই দফা সরকার গঠনের পর মাত্র ৪৪টি আসনে জয়ী হতে পেরেছিল কংগ্রেস।

এদিকে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তফসিল ঘোষণায় অযথা দেরি করার অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস। বলা হচ্ছে, মোদি সরকারকে সুবিধা করে দিতেই তফসিল ঘোষণায় বিলম্ব করা হচ্ছিল। তবে নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

গত লোকসভা নির্বাচনের সময় ভারতের নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছিল ২০১৪ সালের ৫ মার্চ। তখন প্রথম দফা ভোটগ্রহণ হয়েছিল এপ্রিলের ৭ তারিখ। আর শেষ দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল ১২ মে। গতবার ৯ ধাপে ভোটগ্রহণ করা হয়।


আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ভোট হবে সাত ধাপে। অর্থাৎ প্রতিটি ধাপেই পশ্চিমবঙ্গের কোনো না কোনো আসনে ভোট হবে। ২০১৪ সালে এখানে পাঁচ ধাপে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল।

এবার প্রথম ধাপে ১১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে ২টি আসনে, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ এপ্রিল ৩টি আসনে, তৃতীয় ধাপে ২৩ এপ্রিল ৫টি আসনে, চতুর্থ ধাপে ২৯ এপ্রিল ৮টি আসনে, পঞ্চম ধাপে ৬ মে ৭টি আসনে, ষষ্ঠ ধাপে ১২ মে ৮টি আসনে এবং সপ্তম ধাপে ১৯ মে ৯টি আসনে ভোট নেওয়া হবে।

পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে লোকসভার ৪২টি আসন। বর্তমানে এই আসনের মধ্যে ৩৪টি রয়েছে তৃণমূলের। কংগ্রেসের ৪টি এবং বামদল ও বিজেপির ২টি করে আসন রয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার ২৩টি আসনে জেতার জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে বিজেপি। নির্বাচনে যাতে সুষ্ঠুভাবে অবাধ সম্পন্ন হয় সে জন্য এবার ৭ দফায় নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে আমাদের আগরতলা প্রতিনিধি জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮ রাজ্যেই ভোট শুরু হচ্ছে ১১ এপ্রিল। ২৫টি আসনে তিন দফায় ভোট হবে। গণনা হবে গোটা দেশের সঙ্গে এক সঙ্গে, ২৩ মে।

উত্তর-পূর্ব ভারতের ৮ রাজ্যের মধ্যে অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও সিকিমে ১১ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটেই ভারতীয় লোকসভার প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন। প্রথম দফার ভোটে আসামের ৫টি, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের একটি করে আসনেও ভোট হচ্ছে।

দ্বিতীয় দফায় ১৮ এপ্রিল ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের বাকি ১টি করে আসনে ভোট হবে। আসামে দ্বিতীয় দফায় ভোট হচ্ছে বাকি ৫টি আসনে। তৃতীয় দফায় ২৩ মে আসামের বাকি ৪টি আসনে ভোট হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, উত্তর পূর্ব ভারতের ৮ রাজ্যেই বর্তমানে বিজেপি বা তাঁদের বন্ধু দল রয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় অবশ্য ৮ রাজ্যের পাঁচটিই ছিল কংগ্রেস শাসিত। আর ত্রিপুরা ছিল সিপিএমের দখলে।

গত লোকসভা নির্বাচনে ২৫টির মধ্যে কংগ্রেস ও বিজেপি ৮টি করে আসন পায়। বাকি ৯টির মধ্যে ২টি পায় সিপিএম। বাকি ৭টি যায় আঞ্চলিক দলের দখলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *