Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

কুষ্টিয়ায় এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড কে ২ লাখ টাকা জরিমানা : প্রতিষ্ঠান সিলগালা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া জেলা শহরের পশ্চিমে মজমপুর এলাকায় সাফিনা টাওয়ারের ৫ম ও ৬ষ্ট তলায় অবস্থিত এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এগ্রোফুড এন্ড কসমেটিক এর বিরুদ্ধে মিথ্যা বিজ্ঞাপন, অসত্য বক্তব্য, বিভিন্ন সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ে ক্রেতা সাধারনকে আকৃষ্ট করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ২ সেপ্টেম্বর বুধবার মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়৷

এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৪৪ ধারার আওতায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২,০০০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা অর্থদন্ডের শাস্তি প্রদান করা হয় ও প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়। জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সবুজ হাসান এঁর ভ্রাম্যমাণ আদালতে উক্ত শাস্তি প্রদান করা হয়।

মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে জেলা পুলিশ কুষ্টিয়া, সহকারী পরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফরতর ও সহকারী পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সহ আরও অনেকে সহায়তা প্রদান করেন।

কুষ্টিয়ায় এক্সিল্যান্ড ওয়ার্ল্ড নামে প্রতারণা মহাফাঁদ বসানো হয়েছে। খোদ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিলাশ বহুল অফিস বানিয়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে শিকার চলছে। এমন খবর কয়েকদিন ধরে কুষ্টিয়ার বাতাসে ভাসতে থাকে। পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসন খোঁজ খবর নিতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটির। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে প্রতিষ্ঠানটির কোন কাগজপত্র নেই। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জুডিশিয়াল শাখার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সবুজ হাসান পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালায় ওই নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে। তিনি গিয়ে দেখতে পান একেক প্রোডাক্টের গায়ে একের রকম লেবেল। কোন পন্যের গায়ে কসমেটিকস, কোন পন্যের গায়ে খাদ্যের লেবেলিং করা।

এছাড়া যেসকল পন্য তারা প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করে আসছেন তার অধিকাংশ বিএসটিআইর অনুমোদন নিতে হয়। পন্যের গায়ে বিএসটিআই এর সীল সংযুক্ত। কিছু পণ্যের গায়ে লেখা আছে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিক্ষিত। পণ্যের গায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে তাও বড় ধরণের প্রতারণা। এ্যাক্সিল্যান্ড ওয়ার্ল্ড একটি এমএলএম কোম্পানী বলে দাবী সদস্যদের। যদিও ২০১৪ সালে বাংলাদেশে এমএলএম কোম্পানী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বানিজ্য মন্ত্রনালয়। সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যান এমএলএম কোম্পানীর কর্ণধররা।

হাইকোর্টে টিকে যায় ৫ টি কোম্পানী। ওই ৫ টি কোম্পানী ব্যবসা করতে পারবেন বলে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই ৫ টি কোম্পানীর মধ্যে এ্যাক্সিল্যান্ড ওয়ার্ল্ড নেই। এর অর্থ এ্যাক্সিল্যান্ড ওয়ার্ল্ডের এমএলএম ব্যবসাও অবৈধ। এমএলএম কোম্পানীর সংজ্ঞায় বলা আছে ‘ক্রেতাকে স্বপ্ন দেখিয়ে ক্রেতার কাছে সেমিনারের মাধ্যমে কোন পন্য তুলে দেয়া হলে তাকে এমএলএম ব্যবসা বলে।’ দিশা টাওয়ার সহ বিভিন্ন জায়গায় এ্যাক্সিল্যান্ড ওয়ার্ল্ড সেমিনার করে তাদের পন্য বিক্রি করেছে। এক একটি পন্যের গায়ে একেক রকম কথা লেখা যা ইংরেজিতে। কোনটায় কসমেটিক কোনটায় ফুড।

সূত্র বলছে, এটি একটি প্রতারণার মহাফাঁদ। একজনকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয় এই প্রতিষ্ঠানের। এরপর সে নিজে মালিক বনে যায়। পদ পদবীতে জায়গা হয় জিএম। কুষ্টিয়ায় এই ভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন শত শত মানুষ। যে প্রতারণার শিকার হয়েছে সে আবার পরবর্তীতে বড় প্রতারক হচ্ছে। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। ম্যাজিষ্ট্রেট সবুজ হাসান প্রতারণা দেখে হতবাক হয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মীরা জানান, অফিসে প্রায় ১০০ জন নিয়ে সেমিনার করে পন্য তুলে দেয়া হচ্ছিলো। প্রতারণার দায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনে ভ্রাম্যমান আদালত প্রতিষ্ঠানের জিএম পরিচয়দানকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিষ্ট্রার তারেক উদ্দিন সহ সোহানুর রহমান,জাকির হোসেন, তুহিন আলী , চাদ সরকারকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয় সীলগালা করে দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সবুজ হাসান বলেন, জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Exit mobile version