“সম্ভব” রোনালদো বলেই !

অনলাইন ডেস্ক: প্রথম লেগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে ২-০ গোলের ব্যবধানে হার। ফিরতি লেগে অতিমানবীয় কিছু করতে না পারলে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে যেতে হবে জুভেন্টাসকে। অতিমানবীয় কারণ, অ্যাটলেটিকোর রক্ষণ যে ইউরোপের অন্যতম সেরা। এরপর আবার এই ম্যাচের আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে জুভেন্টাসের হয়ে রোনালদোর গোল মাত্র একটি! অথচ এই চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটির নামই রোনালদো। শেষ পর্যন্ত রোনালদো তাঁর নামের মর্যাদা রেখেছেন। প্রমাণ করেছেন তিনি কেন সেরাদের একজন। পর্তুগীজ সেনার হ্যাটট্রিকে প্রথম লেগ হেরেও ৩-২ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে জুভেন্টাস।

রোনালদোর ওপর অবশ্য আস্থা রেখেছিলেন একজন। কারণ তিনি এমন চিত্রনাট্য আগেই পড়েছিলেন। যেখানে নায়ক এই রোনালদোই। ২০১৫-১৬ চ্যাম্পিয়নস লিগের মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদে থাকাকালীন একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন রোনালদো। ওই মৌসুমে ভলফ্সবুর্গের বিপক্ষে প্রথম লেগে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরেও দ্বিতীয় লেগে রোনালদোর হ্যাটট্রিকে সেমিতে উঠেছিল রিয়াল। সেবার অ্যাটলেটিকোকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ভলফ্সবুর্গের তখনকার কোচ দিয়েতর হেকিং মঙ্গলবারের ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘যদি কেউ পারে এটা, রোনালদোই পারবে। তাঁর পক্ষে সবই সম্ভব।’ 
ঘটনা হচ্ছে তিন বছর পর সেই রোনালদো এখন স্পেন থেকে ইতালিতে তাঁবু ফেলেছেন। আর চিত্রনাট্য ওই তিন বছর আগেরটাই। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে ২-০ গোলে হেরেছে জুভেন্টাস। মঙ্গলবার রাতে তুরিনে ফিরতি লেগে রোনালদোর হ্যাটট্রিকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ৩-০ গোলের ব্যবধানে হেরেছে জুভেন্টাসের কাছে; হেরেছে রোনালদোর কাছে। সত্যিই তো, ‘রোনালদোর পক্ষেই সম্ভব!’

প্রথমার্ধের পঞ্চম মিনিটেই ম্যাচে কী ঘটতে যাচ্ছে তার আঁচ পায় দর্শকেরা। অতিথিদের শুরু থেকেই চেপে ধরে জুভেন্টাস। আক্রমণে নেতৃত্ব দেন রোনালদো। ষষ্ঠ মিনিটে কিলিয়ানির পা থেকে স্বাগতিকেরা গোলও পায়। কিন্তু কিলিয়ানিকে বল বাড়ানোর আগে সেটা অ্যাটলেটিকোর গোলরক্ষকের হাতের ভেতর থেকে পা দিয়ে কেড়ে আনেন রোনালদো। গোলকিকের বাঁশি বাজান রেফারি। বাতিল হয় গোল। এরপর গোলের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি দর্শকদের। ২৭তম মিনিটে ফেডরিক বের্নারদেস্চির ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে বল জালে জড়ান রোনালদো। মিনিট চারেক পর ২৩ গজ দূর থেকে বের্নারদেস্চির নেওয়া ফ্রি কিক অ্যাটলেটিকোর গোলপোস্টের ওপর দিয়ে গেলে গোলবঞ্চিত হয় জুভেন্টাস। প্রথম গোলের পর প্রথমার্ধে বেশ কটি ভালো সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে পারেনি ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা।

দ্বিতীয়ার্ধে ৪৯তম মিনিটে অতিথিদের বুকে ফের ছুরি চালান রোনালদো। ক্যানসেলোর হাওয়ায় ভাসানো ক্রসে মাথা ছোঁয়ান রোনালদো। সেটা ফিরিয়েও দেন অ্যাটলেটিকোর গোলরক্ষক। কিন্তু ততক্ষণে উল্লাসে মাতোয়ারা জুভেন্টাস খেলোয়াড়েরা। কারণ, গোললাইন টেকনোলজিতে দেখা গেল বল লাইন পার হয়েছে ফেরানোর আগেই। 


এরপর দুই দলই গোলের আপ্রাণ চেষ্টা চালায় কিন্তু অ্যাটলেটিকোর প্রায় সব শটই বেপথু। ততক্ষণে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হতে খুব বেশে দেরি নেই। ঘড়ির কাঁটায় রেফারির সতর্ক চোখ একটু পরপর। তখনই ঘটে বিপত্তি! নিজেদের ডি বক্সে ফাউল করে বসেন কোররেয়া। বের্নারদেস্চিকে ধাক্কা দিলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। জুভেন্টাস সমর্থকদের বুকের ধুকপুকানি থামিয়ে গ্যালারিতে উল্লাসের রঙ ছড়িয়ে দিয়ে সফল স্পটকিক নেন রোনালদো। 
ম্যাচের আগে সমর্থকদের বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন রোনালদো। রোনালদো বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়েছেন। আরও একবার প্রমাণ করলেন তিনিই পারেন, তাঁর পক্ষেই সব সম্ভব!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *