নিজস্ব প্রতিবেদক : যথাযথ ধর্মীয় মর্যদায় শুভ মহালয়া উদযাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর থেকে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই উৎসব সমাপ্ত হবে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই দিনে কৈলাশ থেকে মা দুর্গা পিতৃগৃহে আগমন করেন। তাই মহালয়া থেকে দুর্গা উৎসবের আমেজ শুরু হয়। তবে এবার করোনা মহামারির কারণে বাদ্য-বাজনা তেমন না বাজলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়েছে। ভোর হতেই সকল পূজা মণ্ডপে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণ শোনা যায়।
এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মন্দির ও পূজামণ্ডপগুলোতে ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজিন ছিল। চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক-কাঁসর ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা। ভক্তিমূলক সঙ্গীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনা ছিল দিনের আনুষ্ঠানিকতার অংশ। অনেক ভক্তই তাদের মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার সদগতি প্রার্থনা করে তর্পণ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোর ৬টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে চণ্ডীপাঠ করে দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। সকাল ৯টায় ত্রিভঙ্গচরণ ব্রহ্মচারীর চণ্ডীপাঠের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে ইয়াচণ্ডী অর্চনা ছিল। বেলা ১১টা পর্যন্ত বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা আবাহন ও ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সকালে মহালয়ার মূল আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে ঘট স্থাপন করে ফুল, তুলসী ও বেলপাতা দিয়ে পূজা করা হয়।
রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরেও ছিল অনুরুপ আনুষ্ঠানিকতা। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ চণ্ডীপাঠ ও চণ্ডীপূজা ছাড়াও আবাহন সঙ্গীত পরিবেশন করেন। গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ বনানী পূজামণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ ছাড়া স্বামীবাগের লোকনাথ মন্দির, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী পূজামণ্ডপ এবং খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে সনাতন সমাজকল্যাণ সংঘের (সসকস) পূজামণ্ডপসহ রাজধানীর অন্য মন্দির ও মণ্ডপেও মহালয়ার অনুষ্ঠান ছিল।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর দুর্গাপূজার ছয়দিন আগে এই মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এ বছর বিশেষ তিথির কারণে পূজার প্রায় এক মাসে আগে মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।