যেসব কারণে দাড়ি রাখা উচিত

আরমান শেখ: ইদানিং একটি প্রশ্ন আমার কাছে বেশি আসছে। তা হলো- দাড়ি রাখা ফরজ? ওয়াজিব? নাকি সুন্নত? এই প্রশ্নের উত্তরেই আজকের বিষয়ের অবতারণা। প্রথমত, দাড়ি রাখা ফরজ না ওয়াজিব না সুন্নত এই সম্পর্কে কোনো উত্তর দেওয়া সিদ্ধান্তের নামান্তর। কোরআন হাদিসের আলোকে কেন দাড়ি রাখা উচিত, সে সম্পর্কে কিছু যুক্তি ও প্রমাণের সাহায্যে দাড়ি রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করেছি এখানে।

পবিত্র কোরআন একটি জীবন বিধান। মহান আল্লাহর বাণী। অপরিবর্তনীয় এবং কোন প্রশ্ন ছাড়া মান্য। অর্থাৎ ফরজ। আল্লাহর হাবীব মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. যা করেছেন, করতে বলেছেন- তাই করণীয়। আর যা বলেননি, করেননি তাই বর্জনীয়। অর্থাৎ এটা হাদিস। কোরআন হাদিসের বাইরে মানব বিবেক খাটানো কুফরি বা কাফেরের কাজ। অর্থাৎ এখানে মানব বিবেকের কোন মত দেবার সুযোগ নেই।

ইমাম বোখারী (রহ.) প্রমাণ করেছেন, ইসলামের বিধান শরীয়ত মতে, হযরত নবী সা. এর নিষেধাবলী হারাম হওয়া অর্থে এবং আদেশাবলী ফরজ ওয়াজিব হওয়া অর্থে পরিগণিত হবে। অবশ্য যদি সেই অর্থ উদ্দেশ্য না হওয়ার অন্য কোনো দলিল পাওয়া যায় তবে তা স্বতন্ত্র কথা। সেই হিসেবে প্রথমেই পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর একটি নিদর্শন যা তাঁর খালেস বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য। যারা কোরআনের কথা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়ে মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন ‘এটা সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই- মুত্তাকীদের পথ প্রদর্শক।

যারা গায়েবে বিশ্বাস করে, ঠিকভাবে নামায পড়ে ও তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা হতে খরচ করে।যারা বিশ্বাস করে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি এবং যারা পরকালের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। উহারাই স্বীয় রবের প্রদর্শিত পথে অবস্থিত এবং উহারাই পাবে মুক্তি।’ (সুরা বাকারা,আয়াত-২-৫)

মহান আল্লাহ্‌ বলেছেন, অবশ্যই রাসুল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। তাঁর মর্যাদা ও গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহ্‌ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, আর যখন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে আদেশ প্রদান করেন, কোনো মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওই কাজে কোনো অধিকার থাকে না। যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের আদেশ পালন করবে না সে প্রকাশ্যভাবে পথভ্রষ্ট হবে। (সুরা আহজাব, আয়াত-৩৬)

অর্থাৎ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে মত দিলে কোনো মুসলমান নারী বা পুরুষের ওই কাজে কোনো মত থাকবে না। আর যদি কারো মত থাকে তবে সে অবশ্যই ভ্রান্ত। সেজন্যই ভ্রান্তদের দলে না থেকে দাড়ি রেখে মহানবীর আদর্শ অনুসরণ করা আবশ্যক। (অন্তত উপরের আলোচনা থেকে আমি নিশ্চিত এই ব্যাপারে। আমার বিবেচনা যদি ভুল হয় তবে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই)। এখানে কি দাড়ি রাখা ফরজ বা ওয়াজিব বা সুন্নত এই ব্যাপারে আলোচনার কোনো অবকাশ রয়েছে?

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মোচ ভালোরূপে কেটে ফেল ও দাড়ি ঝুলিয়ে রাখ। অগ্নিপূজকদের রীতি বর্জন করে চল। (মুসলিম শরীফ) মহানবী সা. মুসলমানদের দাড়ি বড় করতে ও মোচ যথাসম্ভব কেটে ফেলতে বলেছেন বলে আব্দুল্লাহ ইবন ওমরের (রা.) বর্ণনায় রয়েছে। (বোখারী শরীফ, ষষ্ট খণ্ড, হাদিস নম্বর-২২৬৭)

এই হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী ইবন ওমর (রা.) যখন হজ বা ওমরা সমাপ্ত করতেন তখন চুল কাটার সঙ্গে দাড়ি মুষ্টিবদ্ধ করে মুষ্টির নিচে যা অতিরিক্ত থাকতো তা কেটে ফেলতেন। আসুন, দাড়ি রাখবো কি রাখবো না এই ব্যাপারে আর সন্দেহে না থেকে দাড়ি রেখে অন্তত একটি হাদিসের শ্রবণকারী ও মান্যকারী হিসেবে এই পাপী ও ফিতনা সংকুল জীবনের অবসান ঘটাই। তাহলে হয়তো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর হাবীবের সুপারিশ আমাদের নসীব হবো। না হলে আমরা শেষ বিচারের দিন অস্বীকারকারী সাব্যস্ত হবো। একটু ভেবে দেখি, আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ সা. বলার পরও আমরা কোনো কাজ করলাম না তা কি ক্ষমার যোগ্য বা তা পালনে কি কোনো সন্দেহ থাকা উচিত?

কারণ, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, অস্বীকারকারী ব্যতিত আমার উম্মতের সকলেই বেহেস্তে যেতে পারবে। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, অস্বীকারকারী কে? আল্লাহর হাবীব উত্তরে বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য অবলম্বন করে চলবে সে বেহেস্তে যাবে আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করবে সে অস্বীকারকারী সাব্যস্ত হবে। (বোখারী শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদিস নম্বর-২৬৯০) সূত্র:- আমিন মুনশি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *