বাউল সম্রাট লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবস, নেই কোনো আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩০তম তিরোধান দিবস। তবে অন্যান্যবারের মতো কোনো আয়োজন নেই এবারের মৃত্যুবার্ষিকীতে। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে এ দিনে লালন স্মরণোৎসব ও মেলা হয়ে থাকে বহু বছর ধরে। তবে করোনা মহামারি করোনা এবার সেই অনুষ্ঠানের ছেদ পড়েছে। লালন একাডেমি এ স্মরণোৎসব এরই মধ্যে বাতিল করে দিয়েছে।

বাংলা ১২৯৭ সালের পহেলা কার্তিক( ১৭ অক্টোবর) সাধক পুরুষ ফকির লালন শাহ দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকে লালনের অনুসারীরা প্রতি বছর কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে আসছেন। তবে লালন একাডেমী প্রতিষ্ঠার পর এ আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। কোনো বছর সাঁইজির তিরোধান দিবস ঘিরে পাঁচ দিন আবার কোনো বছর তিন দিনের অনুষ্ঠান হত আখড়াবাড়িতে। স্মরণোৎসবের কয়েকদিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে একাডেমি ভবনের নিচতলার পুরো মেঝে জুড়ে আসন পেতে বসতেন। আর উৎসবের দিনগুলোতে তো আখড়াবাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে মরা কালী নদীর পাড় অব্দি বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে হাট বসত বাউল সাধুদের। তবে এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা, পুরো আখড়াবাড়ি জুড়ে সুনশান নীরবতা। আখড়াবাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ এক সভায় এবারের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়।

তাই এবার সহজ মানুষদের মহা সম্মিলন হচ্ছে না। হচ্ছে না গুরু শিষ্যের ভাবের আদান প্রদান। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে বেড়ানো মানুষগুলো এবারের তিরোধান দিবসে সাঁইজিকে স্মরণ করবে নিজ নিজ ধামে।

বর্তমানে লালন সাঁইজির সবচেয়ে বয়স্ক অনুসারী ফকির নহির উদ্দিন সাঁই বলেন, ‘আমাদের মনে অনেক ব্যথা, কারণ গত ৪০ বছর ধরে সাঁইজির তিরোধান দিবসে আখড়াবাড়িতে কটা দিন কাটিয়ে আসি। ভাবের আদান প্রদানে সাঁতার কাটি। কিন্তু এবার সেটি করতে পারছি না।’

তিনি বলেন, লালন মতাদর্শের মূল মন্ত্র হলো মানব কল্যাণ। তাই মহামারির মধ্যে মানব কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আমরা নিজেদের মনকে প্রবোধ দিচ্ছি। তবে নিজস্ব ধামে ছোট পরিসরে সাঁইজির তিরোধান দিবস পালন করবেন বলেন জানান প্রবীণ এ বাউল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *