কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার ৪

নিজস্ব প্রতিনিধি : মাওলানা মামুনুল হক ও আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারের পর কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাসউদ (র.) মাদরাসার ছাত্র আবু বক্কর (১৯) ও মো. সবুজ ইসলাম নাহিদ (২০) একথা জানিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক মো. আলামিন (২৭) ও মো. ইউসুফ আলীকে আটক করা হয়।

রোববার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের ধরা হয়। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত আবু বক্কর এবং নাহিদ। আর তাদের এই ঘটনা জানতেন দুই শিক্ষক আলামিন এবং ইউসুফ।

তিনি বলেন, চারজন আমাদের হেফাজতে আছে। আমরা আশা করি এই চারজনের কাছে যথেষ্ট তথ্য পাবো।

পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার প্রেস রিলিজে জানানো হয়, গত ৫ ডিসেম্বর রাত ২টা ৫ মিনিট থেকে ২টা ১৩ মিনিটের মধ্যে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনার পর ঘটনাস্থলসহ কুষ্টিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী ও কালো কোর্ট পরা দুজনকে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের পূর্বদিক থেকে এসে ভাস্কর্যের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বাঁশের মই দিয়ে উপরে উঠে একজনের কাছে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে ভাস্কর্যটি ভাংচুর করতে দেখা যায়।

এপর জুগিয়া পশ্চিমপাড়া মাদ্রাসা ইবনে মাসউদ (রাঃ) মাদ্রাসার জামাত বিভাগের ছাত্র মো. আব্দুল্লাহ (১৫) ও মো. আবদুর রহমান (১৭) নামে দুই ভাইকে আটক করা হয়। আটকের পর ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা ভাস্কর্যে ভাঙচুর জালানো দুজনকে চিনতে পারে এবং ওই দুজন একই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র মো. আবু বক্কর ও মো. সবুজ ইসলাম নাহিদ বলে জানান। তাদের দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করে পুলিশ জানতে পারে ভাস্কর্য ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত মো. আবু বক্কর কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার শিংপুর (মৃধাপড়া) গ্রামের মো. সমসের মৃদার ছেলে এবং মো. সবুজ ইসলাম নাহিদ একই জেলার দৌলতপুর থানার ফিলিপনগর (গোলাবাড়ীয়া) এলাকার মো. সামছুল আলমের ছেলে।

এরপর অভিযান চালিয়ে তাদের দুজনকে নিজ নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি।

গ্রেফতারের পর ভাস্কর্য ভাঙচুরের কথা স্বীকার করে তারা জানান, মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়েই এই কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের উদ্দেশ্যে ৫ ডিসেম্বর রাত ১০টায় মাদ্রাসার সবাই ঘুমিয়ে গেলে তারা দুজন গোপনে বের হয়ে পায়ে হেটে পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের নিকটে আসেন। এরপর ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যবহৃত বাঁশের মই দিয়ে উপরে উঠে নহিদের ব্যাগে থাকা হাতুড়ি বের করে দুজনে মিলে ভাস্কর্যটিতে ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা পুনরায় পায়ে হেটে মাদ্রাসায় গিয়ে সবার অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে তারা তাদের শিক্ষক মো. আল আমিন ও মো. ইউসুফ আলীকে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনাটি জানালে ওই দুই শিক্ষক তাদের মাদ্রাসা থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতে বলেন। আবু বক্কর ও নাহিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মাদ্রাসার ওই দুই শিক্ষককেও গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়; যেটি তদন্তাধীন রয়েছে বলেও জানানো হয় ডিএসবি’র প্রেস রিলিজে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *