অনলাইন ডেস্ক : আজ ২৫ ডিসেম্বর। শুভ বড়দিন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলবে উত্সবের নানা আয়োজন। বড়দিন উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তাঁরা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দুই হাজার ২০ বছর আগের ২৫ ডিসেম্বর জন্ম নেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেওয়া, মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার করতে পৃথিবীতে তাঁর আগমন ঘটেছিল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা আজ যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবেন। তবে মহামারি করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বড়দিনের উত্সব উদযাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।
ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পাস্টার লিওনার্ড বিধান রায় বলেন, ‘বড়দিন হচ্ছে, বিশ্বের সমগ্র মানবজাতির পাপমুক্তির দিন। এদিনে প্রভু যিশু স্বর্গধাম থেকে ধরাধামে এসেছিলেন। মানবজাতির মুক্তির জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ জন্যই আমরা বড়দিন উদযাপন করি।’ তিনি বলেন, বড়দিন উপলক্ষে আলোকসজ্জাসহ সব আয়োজন হবে। তবে করোনার জন্য কিছু প্রস্তুতি সীমিত করা হয়েছে। বহিরাগতরা গির্জায় প্রবেশ করতে পারবে না। নগর কীর্তন হবে না। শুধু প্রার্থনা, কেক কাটা ও ধর্মীয় আরাধনাসংগীতের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ হবে। করোনা প্রতিরোধে গির্জায় হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবস্থা, উপাসনায় দেড় থেকে দুই ফুট দূরত্ব বজায় রাখা ও অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করে প্রবেশ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে প্রতিবছরই সরকারি ছুটি থাকে। আজ শুক্রবার সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্রগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান ও প্রকাশনার মাধ্যমে দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরবে। উৎসব উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের সব গির্জাসহ খ্রিস্টান পরিবারগুলো ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে, কেক তৈরি করে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে দিনটি উদযাপন করবে। সান্তা ক্লজ শিশুদের মধ্যে উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দে ভরিয়ে তুলবেন দিনটি।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে গির্জায় গির্জায় বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ এই সাজসজ্জায় গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে দৃষ্টিনন্দনভাবে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় (পবিত্র জপমালার গির্জা) বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানো হয়েছে। ভেতরে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি।
এদিকে রাজধানীতে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথাড্রাল চার্চের ফাদারদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কমিশনার বলেন, খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের বড়দিনের উত্সব এবার বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপন করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর ৬৬টি গির্জায় বড়দিনের উত্সব হওয়ার কথা রয়েছে।
পাঁচতারা হোটেলে সীমিত আয়োজন : করোনা পরিস্থিতির কারণে পাঁচতারা হোটেলগুলোতে বড়দিনের আয়োজন হচ্ছে সীমিত পরিসরে। থাকছে বিশেষ আয়োজনসহ বাহারি কেকসহ সুস্বাদু খাবার। এদিন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শিশুদের কাছে এসে উপহার দেবেন সান্তা ক্লজ। রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওসহ বেশ কয়েকটি হোটেল ঘুরে দেখা যায়, স্বল্প পরিসরে সেজেছে হোটেল লবিগুলো। বাইরে আলোকসজ্জা তুলনামূলক কম। দেখা যায় বাহারি কেক আর ক্রিসমাস ট্রি।
র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। হোটেলের লবিতে রয়েছে ক্রিসমাস ট্রি ও সাজসজ্জা। বিশেষ ডিনারের পাশাপাশি শিশুদের জন্য থাকছে কেক, আইসক্রিম ও মজাদার খাবারের আয়োজন। সান্তা ক্লজ দেবেন শিশুদের বাড়তি আনন্দ। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (সেলস) মোহাম্মদ জিসান বলেন, ‘বড়দিনে আমাদের তিন ক্যাটাগরির আয়োজন রয়েছে শিশুদের জন্য জিঙ্গেল অ্যান্ড জয় কিডস পার্টি। এখানে খরচ হবে ভ্যাট ছাড়া জনপ্রতি ৭৫০ টাকা। এ ছাড়া বিশেষ ক্রিসমাস লাঞ্চ ও ডিনারে খরচ হবে দুই হাজার ৯০০ টাকা এবং তিন হাজার ৯০০ টাকা (ভ্যাট ছাড়া)।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল সেজেছে বড়দিনের আমেজে। হোটেলটিতে বিশেষ দুপুর ও রাতের খাবারের পাশাপাশি থাকবে শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য সান্তা ক্লজ। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিকেশন ম্যানেজার সৈয়দা সাইকা ফলীয়া বলেন, ‘আমাদের দুপুরের বিশেষ খাবার ও রাতের খাবারের জনপ্রতি খরচ পড়বে যথাক্রমে চার হাজার ৫০০ টাকা ও পাঁচ হাজার টাকা।