নিজস্ব প্রতিবেদক: মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এর সচিব হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ও জননেত্রী শেখ হাসিনার রুপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে তার ভাবনাকে প্রকাশ করেছেন “কারিগর” নামের এক বিশেষ প্রকাশনার মাধ্যমে।
গতানুগতিক শিক্ষার পুরাতন ধারনার স্থলে আধুনিক প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্মৃদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা এর নিশ্চয়তা বিধানই “কারিগর” এর মুল আলোচ্য বিষয়।
১৯ আগষ্ট ১৯৭৩ , সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দেওয়া ভাষণকে সব সময় হৃদয়ে ধারণ করেন মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ।
(বাবারা, একটু লেখাপড়া শেখো, যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ করো, ঠিকমত লেখাপড়া না শিখলে লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু থাকে বাপ মাকে সাহায্য করো। প্যান্ট পরা শিখলে বাবার সাথে হাল ধরতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখো। কানাডার দেখলাম ছাত্ররা ছুটির সময় লিফট চালায়। ছুটির সময় দু পয়সা উপার্জন করতে চায়। আর আমাদের ছেলেরা বড় আরামে খায়, আর তাস নিয়ে ফটাফট খেলতে বসে পড়ে।
গ্রামে গ্রামে বাড়ির পাশে বেগুন গাছ লাগিও, কয়টা মরিচ গাছ লাগিও, কয়টা লাউ গাছ আর কয়টা নারকেলের চারা লাগিও। বাপ মারে একটু সাহায্য করো। কয়টা মুরগী পাল, কয়টা হাস পাল, জাতির সম্পদ বাড়বে। তোমার খরচ তুমি বহন করতে পারবে।
বাবার কাছ থেকে যদি এতোটুকু জমি নিয়ে দশটি লাউ গাছ, পঞ্চাশটি মরিচ গাছ, কয়টি নারকেলের চারা লাগিয়ে দাও। দেখবে দেখবে ২/৩ শত টাকা আয় হয়ে গেছে।
তোমরা ঐ টাকা দিয়ে বই কিনতে পারবে। কাজ করো, কঠোর পরিশ্রম করো, না হলে বাঁচতে পারবে না।
শুধু বিএ, এমএ পাস করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল, স্কুল কলেজ যাতে সত্যিকারে মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। কেরানি পয়দা করে ইংরেজরা একবার শেষ করে দিয়ে গেছে দেশটা। ……………………. ১৯ আগষ্ট ১৯৭৩ , সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দেওয়া ভাষণ)
অন্যদিকে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৯ তম সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন আগামী পৃথিবী হবে সম্পদের পারস্পারিক অংশিদারিত্ব ও কারিগরি জ্ঞান নির্ভর এক সুন্দর পৃথিবী। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত ডঃ কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন ও কারিগরি শিক্ষার উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করে রিপোর্ট প্রদান করে।
আর জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারিগরি শিক্ষার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এর চাহিদা মোকাবেলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেন। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালে যেখানে কারিগরি শিক্ষার এনরলমেন্ট এর হারএক পার্সেন্ট এর নিচে ছিল বর্তমানে তা প্রায় ১৭ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। ২০১০ সালের শিক্ষা নীতিতে কারিগরি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিভক্ত করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ নামে নতুন একটি বিভাগ সৃষ্টি করা হয়।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্না রয়েছে বর্তমান সরকারের। বেসরকারি পর্যায়ে যেসব কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে বর্তমান সরকার। টেকনিক্যাল শিক্ষায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা যাতে বৃত্তিমূলক সহযোগিতা পায় সরকার ইতিমধ্যে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের নারী জনশক্তিকে আরো যোগ্য করে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর।
সরকার কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ স্থাপন করেছে তার অন্যতম প্রধান কাজ হল মাদ্রাসার প্রচলিত শিক্ষার সাথে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কিছু যুক্ত করা এবং সেইসাথে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহারিক বা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হয় যাতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পূর্বের তুলনায় নিজেদের বিজ্ঞানমনস্ক উৎপাদনক্ষম জনশক্তিতে পরিণত হয়। ফলে তারা যেন সোনার বাংলা গড়তে বা ২০৪১ সালে এ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে যোগ্য শরিক হয়ে উঠতে পারে। এইসব লক্ষ্য অর্জনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কিভাবে কোথায় এবং কী ধরনের কাজ করছে তার প্রচেষ্টা, অর্জন, ফলাফল ইত্যাদি তথ্য ভিত্তিক প্রকাশনা কারিগর।
বইটির একটি বিশেষত্ব হলো- চাকরি প্রাপ্তি এবং বেকার সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষায় কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণরত শিক্ষার্থীদের একই সাথে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কিত প্রস্তাবনা। বর্তমানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৪৪ লক্ষ শিক্ষার্থীদের চাকরির অধিকতর সুযোগ তৈরি হবে এবং বেকার সমস্যার সমাধান সহজতর হবে বলে তিনি মনে করেন।
বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জাতির জনকের দুই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে। মুজিব জন্মশতবর্ষে বইপত্র প্রকাশনার মাধ্যমে কারিগর বইটি প্রকাশিত আর বইটির স্বত্বাধিকারী রাখা হয়েছে মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদের তিন পুত্র আকিব আহমেদ, আবির আহমেদ ও আরাফাত আহমেদকে।
মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনের সম্মানসহ এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান । এর আগে ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এর সচিব। ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরিবহন কমিশনার, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশ স্কাউটস এর সর্বোচ্চ এ্যাওয়ার্ড “সিলভার টাইগার” অর্জন করেন এবং বাংলাদেশ স্কাউটস এর সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।