শপথ নিয়েই বিভেদ দূর করার প্রতিশ্রুতি জো বাইডেনের

অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই রাজনৈতিক উগ্রবাদ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য এমনকি ঘরোয়া সন্ত্রাসবাদের শেকড় ওপরে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন। একইসঙ্গে নতুন করে শুরুর ডাক দিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) প্রখ্যাত মার্কিন সংগীত শিল্পী লেডি গাগার কণ্ঠে আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত দিয়েই শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা। তারপরই শপথ বাক্য পাঠ করতে বেগুনি রঙের ব্লেজার পরে মঞ্চে আসেন কামালা হ্যারিস। তাকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র।

এর মধ্যে দিয়েই মার্কিন ইতিহাসে প্রথম কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন কমলা। তাকে প্রথমেই শুভেচ্ছা জানান তার স্বামী তার ডগলাস এমহফ। প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং দক্ষিণ এশীয় হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন কমলা।

মঞ্চে আসেন মার্কিন আরেক সংগীত শিল্পী জেনিফার লোপেজ। এরপরই শেষ হয় অপেক্ষার পালা। আসে কাঙ্খিত মাহেন্দ্রক্ষণ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জো বাইডেনকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্ট। সংবিধানের অনুসারে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন। সংবিধানের অনুসারে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন।

শপথ নিয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি সব মার্কিনিদের প্রেসিডেন্ট। বেশ লম্বা সময় ধরেই বক্তব্য রাখেন সদ্য শপথ নেওয়া ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার কণ্ঠে ছিল জাতীয় ঐক্যের ডাক। ক্যাপিটল হিলকে পবিত্র ভূমি উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, কিছু উগ্র জনতা কদিন আগেও সহিংসতা চালিয়ে আমেরিকার ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছিল। তবে তা সম্ভব হয়নি। আমেরিকাকে নতুন করে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’

বিশেষ করে মার্কিন রাজনীতিতে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করার আহ্বান জানান তিনি। একের অপরের কথা শোনা এবং সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখানোর কথাও বলেন বাইডেন। এতো দূর আসার পেছনে মার্কিনিদের সহযোগীতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সবাইকে বক্তব্য শেষ করেন বাইডেন।

বাইডেনের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর মঞ্চে পারফর্ম করেন মার্কিন কবি আমন্ডা গোরম্যান।

এদিন বাইডেন ও কামালার অভিষেক অনুষ্ঠানে ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ও বিল ক্লিনটন। ওবামার সঙ্গে রয়েছেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও ক্লিনটনের সঙ্গে সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনসহ অনেকে।

বাইডেনের জন্য মার্কিন রাজনীতির চূড়ায় পৌঁছানোর এই পথ মোটেও সহজ ছিল না। তিনবারের চেষ্টায় এই সাফল্য ধরা দিয়েছে তার হাতে। ১৯৮৭ এবং ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাইডেন। দু’বারই ব্যর্থ হন। কিন্তু ২০২০ সালে আর নিরাশা নয়, ধরা দিয়েছে বহুল প্রত্যাশিত সেই সফলতা। বিপুল ভোটে জিতে ট্রাম্পের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ।

নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেনকে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরাজয় অস্বীকার করেছেন বারবার। ক্ষমতা হস্তান্তরে তার প্রশাসন চরম অসহযোগিতা করেছে বাইডেন টিমকে।

এর আগে গত ৬ জানুয়ারি পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতা ঘটনা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য সামনের দিনগুলো মোটেও সহজ হবে না। করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির কারণে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য বাইডেনকে বেশ ভুগতে হবে। এজন্য আগামী দিনগুলো খুব হিসাব করে পা ফেলতে হবে নতুন প্রশাসনকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *