বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় : ৪ হোমিও ব্যবসায়ী গ্রেফতার

বগুড়া প্রতিনিধি :

বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে একই পরিবারের পিতা-পুত্রসহ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে জেলা পুলিশ বিভাগ থেকে ৮ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এদিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিষাক্ত মদ বিক্রির অভিযোগে ৪ জন হোমিও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে মারা যাওয়া সকলেই শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ ছিল।

 

পুলিশি অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা হলেন বগুড়া জেলা শহরেরে করতোয়া হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী ও নাটাপাড়ার বাসিন্দা শহিদুল আলম সবুর (৫৫), শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিজের স্বত্বাধিকারী মো. নুরুন্নবী (৫৮), শহরের গালাপট্টির মুন হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী ও জেলা শহরের ছোটকুমিড়ার বাসিন্দা আব্দুল খালেক (৫৫), গালাপট্টি এলাকার হাসান হোমিও হলের কর্মচারী ও জেলা শহরের আকাশতারা এলাকার বাসিন্দা আবু জুয়েল (৩৫)। গ্রেফতারের পর তাদেরকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোথায় কোথায় বিষাক্ত মদ তৈরি করা হয় সেখানে অভিযান চলছে।

তাদের বিরুদ্ধে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানের আড়ালে এ্যালকোহল জাতীয় বিষাক্ত মদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ১ ফেব্রæয়ারি রাতে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বিষাক্ত মদ পানে অসুস্থ রঞ্জুর ভাই মনোয়ার হোসেন। এই মামলায় বগুড়া শহরের পারুল হোমিও হল, খান হোমিও হল ও পুনম হোমিওসহ কয়েকজন হোমিও ব্যবসায়িকে দায়ী করেন।

 

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে এখন পর্যন্ত ৮ জন মারা গেছে। অন্য যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৮টি লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

 

বগুড়া জেলা পুলিশের তালিকায় বিষাক্ত মদপানে মারা গেছেন বগুড়া শহরের তিনমাথা পুরান বগুড়া দক্ষিণপাড়ার পাদুকা শ্রমিক প্রেমনাথ রবিদাস (৭০), তার ভাই রামনাথ রবিদাস (৬০), প্রেমনাথ রবিদাসের পুত্র সুমন রবিদাস (৩০), ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়ার দিনমজুর মো: পলাশ মন্ডল (৩৫), ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ার আব্দুল জলিল (৬৫), পুরান বগুড়া জিলাদারপাড়ার রমজান আলী (৬৫), ফাঁপোড় পশ্চিম পাড়ার রিকশাচালক জুলফিকার আলী (৫৫), কাটনারপাড়ার হটু মিয়া লেনের সাজু প্রাং (৪৯)। এই ৮টি লাশেরই ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।

 

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, জেলা শহরের কাটনারপাড়া হটুমিয়া লেন শ্রমিক মোজাহার আলী (৭৫), কাহালু পৌর এলাকার অটোরিকশার চালক আবুল কালাম (৫০), পুরান বগুড়ার ক্ষিতিশ ওরফে ভেলু (৬০), বগুড়া সদরের ফাঁপোড়ের দিলবর রহমার দিলীপ (৬০), ছিলিমপুর দক্ষিণপাড়ার মো. রফিক (৪৫) ও ভবেরবাজার এলাকার মো. আলমগীরও (৫০) মদপানে মারা গেছে। এছাড়া জেলার শাজাহানপুর থানা পুলিশ উপজেলার দুরুলিয়া গ্রামের মেহেদি হাসান (২৫) ও উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামের আবদুল আহাদ (৩০) মদপানে মারা যাওয়ার অভিযোগে লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। বগুড়া সদর থানা পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে মোজাহার আলীসহ দুইজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

 

বগুড়া সদর থানা সুত্রে জানা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি রাতে জেলা শহরের পুরান বগুড়ায় একটি বিয়ের বাড়িতে বেশ কয়েকজন বিষাক্ত মদ পান করেন এছাড়া জেলা শহরের ভবের বাজার, কালিতলা, ফুলবাড়ি ও কাটনারপাড়া এলাকায় আলাদা করে বিষাক্ত মদপান করে বেশ কয়েজন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।

 

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির জানান, ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে চারজন হোমিও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মেশানোর কারণে সেটি বিষাক্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *