Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

দুই দেশের যুদ্ধ শুরু হয়েছিল যে ফুটবল ম্যাচের পর

অনলাইন ডেস্ক : ১৯৬৯ সালে এল সালভেদর এবং হন্ডুরাস চারদিনের একটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল যেখানে হাজার-হাজার মানুষ নিহত এবং বাস্তু-চ্যুত হয়।

সে সংঘাতটি এখনও ফুটবল যুদ্ধ হিসেবে স্মরণ করা হয়।মেক্সিকো সিটির আজটেকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ৯০ মিনিট খেলা শেষে ২-২ গোলে ড্র ছিল।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি ছিল হন্ডুরাস এবং এল সালভেদরের মধ্যে তৃতীয় ম্যাচ।

১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

এর আগে দুই দেশের কেউ বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলতে পারেনি।

হন্ডুরাসে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকরা ১-০ গোলে জয়লাভ করে। এরপর ফিরতি ম্যাচে এল সালভেদর তাদের দেশের মাটিতে ৩-০ গোলে হারায় হন্ডুরাসকে।

ফলে চূড়ান্ত আরেকটি ম্যাচ খেলার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তৃতীয় ম্যাচে খেলা যখন অতিরিক্ত সময়ে ১১ মিনিট পর্যন্ত গড়ায় তখন এল সালভেদর আরেকটি গোল দিয়ে এগিয়ে এগিয়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে জয়লাভ করে মাঠ ছাড়ে এল সালভেদর।

সেই ম্যাচের ৫০ বছর পরে গোলদাতা রদ্রিগেজ বলেন, “আমি যখন গোল করি, তখন আমার মনে হয়েছিল যে তাদের পক্ষে এতো কম সময়ে গোল শোধ করা সম্ভব না। জয়ের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম।”
সেই ম্যাচের তিন সপ্তাহের মধ্যে উভয় দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

১৯৬৯ সালে এল সালভেদর-এর জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ। দেশটি নিয়ন্ত্রণ করতো জমির মালিকরা। কৃষকদের জন্য খুব কম জমি ছিল।

অন্যদিকে এল সালভেদরের তুলনায় হন্ডুরাস ছিল পাঁচগুণ বড় এবং জনসংখ্যা ছিল ২৩ লাখ। হন্ডুরাসও নিয়ন্ত্রিত হতো জমির মালিকদের দ্বারা।

ফলে এল সালভেদরের অনেক মানুষ হন্ডুরাসে যেত কৃষিজমিতে চাষাবাদের আশায়।

একই সঙ্গে মার্কিন ফলের কোম্পানিগুলোতে কাজ করার একটি আশাও ছিল তাদের মনের ভেতরে।
ততদিনে এল সালভেদরের-এর প্রায় তিন লক্ষ মানুষ হন্ডুরাসে গিয়ে বসবাস করছিল।

এ বিষয়টি হন্ডুরাসের কৃষকদের মনে ক্ষোভ তৈরি করে। ক্ষোভ প্রশমনের জন্য দেশটির সরকার ভূমি সংস্কার আইন করে।

এই সংস্কারের উদ্দেশ্য অধিক জমির মালিক কিংবা আমেরিকার ফল কোম্পানিগুলো নয়।

যেসব জায়গায় এল সালভেদেরের থেকে অভিবাসীরা বসবাস করছে সেগুলো ছিল লক্ষ্যবস্তু।

এক পর্যায়ে এল সালভেদর থেকে আসা অভিবাসীদের বিতাড়ন শুরু করে হন্ডুরাস সরকার।
একই সঙ্গে দু্ই দেশের মধ্যে স্থল এবং সমুদ্র সীমা নিয়ে বিরোধ ছিল।

সে সময়ের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে বই লিখেছেন ড্যান হেজড্রন। তিনি বলেন, “সে যুদ্ধটি ছিল ভূমি নিয়ে। একটি ছোট দেশে অধিক সংখ্যক মানুষের বসবাস।”

যখন হন্ডুরাস থেকে অভিবাসীদের বিতাড়ন শুরু হয়, তখন এল সালভেদরের সরকার তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে শুরু করে।

তখন দেশটির ভূমি মালিকরা সরকারকে চাপ দিতে থাকে সামরিক পদক্ষেপ নেবার জন্য। সংবাদপত্রে নানা ধরনের নির্যাতন এবং ধর্ষণের কাহিনীও ছাপা হয়।

দুই দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা চরমে তখন ফুটবল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।

খেলোয়াড় রদ্রিগেজ বলেন, “আমাদের মনে হয়েছিল এল সালভেদরকে জেতানো দেশপ্রেমের মতো দায়িত্ব। আমরা সবাই হেরে যাবার আতঙ্কে ছিলাম। মনে হয়েছিল যদি হেরে যাই তাহলে সে অপমান আমাদের বাকি জীবন তাড়িয়ে বেড়াবে।”

“কিন্তু সে জয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা অবহিত ছিলাম না। আমরা জানতাম না যে এ জয় যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।”

জুন মাসের ২৭ তারিখে মেক্সিকোর রাজধানীতে যখন হন্ডুরাস এবং এল সালভেদর ফুটবল ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন খবর আসে যে এল সালভেদর কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে হন্ডুরাসের সঙ্গে।
রদ্রিগেজ বলেন, “সে গোলটি ছাড়াও যুদ্ধ হতোই।”

পরবর্তীতে উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত আরও জোরদার হয়েছে।

এল সালভেডর তাদের সৈন্যদের হন্ডুরাসের ভেতরে আক্রমণ করার নির্দেশ দেয়। যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা ফেলার নির্দেশও দেওয়া হয়।

অন্যদিকে হন্ডুরাসও প্রতিশোধের জন্য তৈরি হয়ে যায়। একপর্যায়ে ১৮ জুলাই আমেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

কিন্তু এ কয়েকদিনে প্রায় তিন হাজার মানুষ মারা যায়, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ হন্ডুরাসের বেসামরিক নাগরিক। অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়।

রদ্রিগেজ-এর বয়স এখন ৭৩ বছর। তিনি বলেন, “জয় নির্ধারনী সে গোলটি নিয়ে আমার গর্ব ছিল সবসময়।”

“একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে খেলায় আমাদের বিজয়কে রাজনীতিবিদরা এল সালভেদরের ইমেজ বাড়ানোর জন্য কাজে লাগায়।”

কিন্তু উভয় দেশের খেলোয়াড়রা পরষ্পরকে শত্রু বলে মনে করতো না। রদ্রিগেজ বলেন, তারা শুধু খেলার মাঠে পরস্পরকে খেলার প্রতিপক্ষ মনে করতো।

সূত্র: বিবিসি

Exit mobile version