
করোনা সংক্রমিত মাকে বাঁচাতে পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি বরিশালের হাসপাতালে এসেছিলেন। ছয় দিন করোনা ইউনিটে চিকিৎসা শেষে বিজয়ীর বেশে মোটরসাইকেলেই মা ছেলে ঘরে ফিরেছেন। মাকে করোনামুক্ত করতে গিয়ে ছেলে ঝালকাঠির তরুণ ব্যাংকার জিয়াউল হাসান করোনা পজিটিভ হয়েছেন।
শনিবার সকালে আবার মাকে নিয়ে যান নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট করান জিয়াউল, তাঁর মা রেহেনা পারভীন (৫০) ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিব হাসান। মায়ের ও ছোট ভাইয়ের প্রতিবেদন আসে ‘নেগেটিভ’। কিন্তু জিয়াউল করোনা ‘পজিটিভ’।
চলতি বছরের ৫ এপ্রিল থেকে তার মা করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়ে যান। ১৭ থেকে ২২ এপ্রিল ছয় দিন ধরে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে মায়ের সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন করেছেন জিয়াউল হাসান। ঝুঁকি আছে জেনেও তাকে এই কাজে নিবৃত্ত করতে পারেননি চিকিৎসক, নার্স এমনকি স্বজনেরা।
জিয়াউল বলেন, শনিবার সকালে মাকে নিয়ে নলছিটি হাসপাতালে যাই আমরা দুই ভাই। মাকে অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে ফলোআপ টেস্ট করানো হয়। এরপর আমরা দুই ভাইও টেস্ট করাই। দুজনের ফলাফল নেগেটিভ এলেও আমরা পজিটিভ এসেছে। এ সময় জিয়াউল হাসান বলেন, আসুক না, তাতে কী! আমার মা ও ছোট ভাই তো সুস্থ আছে।
জিয়াউলের মা স্কুলশিক্ষক রেহেনা পারভীন বলেন, আমি খুব ভালো আছি। কিন্তু আমার ছেলেটা যে করোনা পজিটিভ হলো এ নিয়ে তো বেশ চিন্তিত। বাড়িতে ১০ দিন ধরে জ্বরে পড়ে ছিলাম। রাতে একটু তন্দ্রা লেগে এলে আবার উঠে গিয়ে দেখতাম, আমার দুই ছেলে আমার দুই পাশে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কত কষ্ট করে মোটরসাইকেলে আমাকে হাসপাতালে নিয়েছে। ছয় দিন এক মুহূর্তের জন্য হাসপাতাল থেকে আমার ছেলে চোখের আড়াল হয়নি।
জিয়াউল হাসানের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকায়। তার মা নলছিটি বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেহেনা পারভীন (৫০) ১০ দিন ধরে জ্বরে ভোগার পর ১০ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। কিন্তু প্রতিবেদন পাননি। এর মধ্যেই ১৭ এপ্রিল সকালে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। কষ্ট কমাতে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে আনেন ছেলে জিয়াউল হাসান।
সেটি দিয়েও অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে রেহেনা পারভীনের। তখন সিলিন্ডার পিঠের সঙ্গে বেঁধে মাকে মোটরসাইকেলে করে ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বরিশালের করোনা ইউনিটে আসছিলেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আসামাত্রাই কেউ একজন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে তা ভাইরাল হয়।