ভারত ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে না যাওয়ার আকুতি

বেনাপোল প্রতিনিধি :

 

ভারত ফেরত যাত্রীদের চাপ নিতে পারছে না যশোরের বেনাপোল। আবাসিক হোটেলেগুলোতে কোনো সিট খালি নেই। নেই থাকার ও খাবারের ভালো পরিবেশ। সেখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা খাবার পানি। প্রতিদিন বাড়ছে ভারত ফেরত যাত্রীর সংখ্যা। যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে খোঁজা হচ্ছে পরিবেশ সম্মত নতুন জায়গা।

 

গত ২৬ এপ্রিল ফের লকডাউন ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন মোট ৬০৮ জন। এর মধ্য বুধবার ফিরেছেন ১৬০ জন। বেনাপোলের ১২টি আবাসিক হোটেলে অর্ধেক খরচে রাখার ব্যবস্থাও করা হয় আগতদের।

বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কাস্টমস কমিশনার, বন্দর পরিচালকের এক জুম মিটিং এর সিদ্ধান্তে ঝিকরগাছার গাজীর দরগা মাদ্রাসা এবং যশোরের কম খরচের আবাসিক হোটেল সমুহে যাত্রীদের রাখার ব্যাপারে আলোচনা হয়।

 

ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় সরকার। নির্দেশনা মোতাবেক ১৫ দিনের কম ভিসা যাদের আছে তারাই কলকাতাস্থ উপ-দূতাবাস থেকে বিশেষ ছাড়পত্র নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। অথচ বেনাপোল ইমিগ্রেশন এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ দিনের বেশী ভিসা আছে এমন যাত্রীরা ছাড়পত্র নিয়েই দেশে ফিরছেন।

 

বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে পাওয়া তথ্যে, গত ৩ দিনে ছাড়পত্র নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৪৪৮ জন বাংলাদেশি। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৫০ জন ভারতীয়। আজ বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেশে এসেছেন ১০৫ জনসহ সর্বমোট ৫৬০ জন। ভারতে ফিরে গেছেন ৬৭ জন। ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের অধিকাংশ রোগী। চিকিৎসার জন্য তারা চেন্নাই, বাঙ্গালুরু, কলকাতা, হায়দ্রাবাদসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থান করছিলেন। লকডাউনের খবর পেয়ে চিকিৎসা শেষ না করেই অনেকেই দ্রুত দেশে ফিরতে শুরু করেন।

 

দেশে ফিরে আসা অসুস্থ যাত্রীরা বেনাপোলে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে চান না। কারণ হিসেবে তারা নিজেদের শারীরিক অসুস্থতা, দেখভাল করার জন্য লোকের অভাব, টাকা পয়সার সমস্যা ছাড়াও পারিবারিক এবং ব্যবসায়িক সমস্যার কথা বলেছেন।

 

বেনাপোল পোর্টভিউ হোটেলের ৬০৭ নম্বর রুমের যাত্রী সিরাজগঞ্জেরর নবীন জানান, তার মা ক্যান্সারের রোগী। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতাল থেকে দুটি কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। অসুস্থ মাকে নিয়ে হোটেলের পরিবেশে থাকতে পারছেন না। বাথরুমে কমোড না থাকাটা বড় সমস্যা।

 

একই হোটেলে ঢাকার বনশ্রী এলাকার ষাটোর্ধ্ব সোলায়মান নামে এক যাত্রী বলেন, চিকিৎসার জন্য ৭ দিন আগে ভারত গিয়েছিলাম। স্ত্রী মারা গেছে। বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা। ঈদের আগে বাসা পাল্টাতে হবে।

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ২/১ দিনের মধ্যে বাড়িতে ফিরতে না পারলে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি দেশে ফেরার ৭ দিন পর আস্ট্রোজেন টেস্টের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

 

আবার বেশীর ভাগ যাত্রী নিজেদের বাসা বাড়িতে অথবা সংশ্লিষ্ট এলাকার হোটেল গুলোতে স্থানীয় থানার তদারকিতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্তের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *