চার কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান মেট্রোরেলের

ন্যাশনাল ডেস্ক : ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পের ২০ কিলোমিটার উড়ালসড়কের মধ্যে এখন পর্যন্ত চার কিলোমিটারের মতো দৃশ্যমান। বাকি ১৬ কিলোমিটার সড়কে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। কোথাও পাইলিং, কোনো কোনো স্থানে পিলার, কিছু কিছু স্থানে চলছে উড়ালসড়কের স্ল্যাব (যেটা দিয়ে ট্রেন চলবে) বসানোর কাজ। দেশের বাইরে জাপানের কারখানায় ইঞ্জিন-কোচ তৈরির কাজও চলমান। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মেট্রোরেল চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্তশাসিত কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএলের প্রকল্প অগ্রগতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন বলছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ২৪ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৩৯ থেকে ৯৩ শতাংশ। শুরুতে সরকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশ চলতি বছরের ডিসেম্বরে চালুর ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গতিতে কাজ না এগোনোর কারণে পুরো সড়কই ২০২১ সালে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেলের দূরত্ব ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। ১৬টি স্থানে স্টেশন থাকবে। এর পুরোটাই হবে উড়ালসড়কে, মাটির ১৩ মিটার ওপর দিয়ে। এ জন্য প্রথমে উড়ালসড়ক নির্মাণ হচ্ছে। পরে রেলের লাইন বসানো হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য লাইনের পাশে শব্দনিরোধক দেয়াল থাকবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার উড়ালসড়ক দৃশ্যমান হয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দূরত্ব ৮ দশমিক ১২ কিলোমিটার। এই পথে পাইলিং ও পিলার তৈরির কাজ চলছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেল বাংলাদেশে প্রথম এবং কারিগরি দিক থেকে এটি একটি জটিল প্রকল্প। ফলে তাড়াহুড়ো করে এর নির্মাণকাজ শেষ করার সুযোগ নেই। তবে প্রকল্প চলাকালীন যানবাহন ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা হচ্ছে। এ জন্য মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা দেখাতে হবে।

প্রকল্পের কাজ আটটি ভাগে বা কন্ট্রাক্ট প্যাকেজে (সিপি) ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র উত্তরায় ডিপোর মাটি উন্নয়নের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকি সাতটি ভাগের মধ্যে রয়েছে উত্তরায় ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণ, লাইন নির্মাণের তিনটি ভাগ, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা স্থাপন এবং ইঞ্জিন ও কোচ তৈরি। এসব কাজ এখন চলমান।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে 
সরকার বলছে, ২০২১ সালে মেট্রোরেল চালু করা হবে। 
২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প ব্যবসা বাড়াচ্ছে নির্মাণসামগ্রীর

মেট্রোরেলের ব্যয়
ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল প্রকল্প ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদন হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তবে সরকার প্রথমে চলতি বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন পুরোটা একসঙ্গেই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাইকা।

মেট্রোরেলের স্টেশন
মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে। এগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় ও মতিঝিল। উত্তরা থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেলের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৩৫ মিনিট। মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোও হবে তিনতলা উচ্চতায়। টিকিট কাউন্টার এবং অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দ্বিতীয় তলায়। আর ট্রেনে ওঠার জন্য প্ল্যাটফর্ম থাকবে তৃতীয় তলায়। স্টেশনগুলোতে ওঠার জন্য সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি থাকবে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি। টিকিট দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ব্যবস্থা হবে স্বয়ংক্রিয়। নিরাপত্তার জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তাবেষ্টনী বা প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর স্থাপন করা হবে।

শুরুতে মেট্রোরেলে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি সেট ট্রেনে কোচ থাকবে ছয়টি। কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ২০২১ সালে চালু হওয়ার পর ব্যস্ত সময় ঘণ্টায় সাড়ে ২২ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। দিনে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে ৫ লাখের কাছাকাছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *