কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন চলছে আটক-জরিমানায়

অনলাইন ডেস্ক :

 

 

 

 

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা সাত দিনের কঠোর লকডাউনের চতুর্থ দিন চলছে আজ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলে জরিমানা এবং গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। তবে জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তল্লাশির সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে গন্তব্যে বা কর্মস্থলে যেতে পারছেন।

 

 

 

 

 

লকডাউনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ায় রাজধানীতে প্রথম দিন ৫৫০ এবং দ্বিতীয় দিন ৩২০ জন এবং তৃতীয় দিনে ৬২১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া তৃতীয় দিনে ৩৪৬ জনকে এক লাখ ছয় হাজার ৪৫০ টাকা জরিমানাও করা হয়। তবে ‘পাঁচ আনি’ মামলা হিসেবে পরিচিত এসব অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকদের ধার্য করা জরিমানার টাকা দিয়ে ছাড়া পাচ্ছেন গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগ।

 

 

 

 

 

 

 

 

অন্যদিকে লকডাউনের তৃতীয় দিনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় সারা দেশে ২৭৭ জনকে প্রায় দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে র‍্যাব। সারা দেশে ৩১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, লকডাউনের মধ্যে আজ রবিবার ব্যাংক বন্ধ থাকবে। নতুন নির্দেশনায়, কঠোর এই লকডাউন চলাকালে ব্যাংক সপ্তাহে চার দিন, প্রতিদিন সাড়ে ৩ ঘণ্টা চলছে লেনদেন। এই সময়ে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি রবিবারও ব্যাংক বন্ধ থাকছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার কথাও বলা হয় নির্দেশনায়। বন্ধ রয়েছে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস। ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে কঠোর লকডাউন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এর আগে গত ৩০ জুন দেশজুড়ে সাত দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন এই নির্দেশনা অনুযায়ী সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সব যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে অ্যাম্বুল্যান্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজের জন্য শুধু যানবাহন চলাচল করতে পারবে। গণমাধ্যম এই বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত থাকবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

 

 

 

 

 

২১ দফা নির্দেশনা

 

 

১. সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।

 

 

২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও বন্ধ থাকবে।

 

 

৩. শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

 

 

৪. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।

 

 

৫. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

 

 

৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

 

 

৭. ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

 

 

৮. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

 

 

৯. পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

 

 

১০. বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।

 

 

১১. শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।

 

 

১২. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

 

 

১৩. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

১৪. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।

 

 

১৫. খাবারের দোকান, হোটেল সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেক ওয়ে) করতে পারবে।

 

 

১৬. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে।

 

 

১৭. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

 

 

১৮. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

 

 

 

১৯. ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয়সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে, বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

 

 

 

২০. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

 

 

 

 

২১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *