প্রিয়া সাহার ইসরায়েলের সঙ্গে কী ?

অনলাইন ডেস্ক : ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের সঙ্গে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ বিন আহমাদ আল খলিফার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিতর্কিত প্রিয়া সাহা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রিয়া সাহার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন পোস্ট, আলজাজিরা, মরক্কো নিউজসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বৈঠকের ছবি প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর করমর্দন করা ছবির পেছনে একটি টেবিলে বসে আছেন প্রিয়া সাহা। ছবিটি দেখে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে প্রিয়া সাহার কাজ কী?

জানা গেছে, এ ছবিটি মূলত ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টুইটারে পোস্ট করা হয়েছিল। সে ছবিতে প্রিয়া সাহার উপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অনেকে বলছেন, তবে কি বাংলাদেশবিরোধী গোপন কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনের ধারাবাহিকতায়ই গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে প্রিয়া সাহার উপস্থিতি? বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলোর কোথাও বাংলাদেশ বা প্রিয়া সাহা প্রসঙ্গ না এলেও এ ছবির এই নারী যে প্রিয়া সাহা এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। কারণ, ট্রাম্পের সঙ্গে প্রিয়া সাহার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেখানেও প্রিয়া একই সাজে ছিলেন। একই শাড়ি, শাঁখা ও ঘড়ি। এমনকি, ভিডিওতে তার শরীরে জড়ানো কালো কোটটি এ ছবিতে চেয়ারে দেখা যাচ্ছে। এর আগে ১৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতার বিষয়ে তার কার্যালয়ে বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে প্রিয়া সাহা নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ট্রাম্পকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশেই থাকতে চাই। এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং জমিজমাও দখল করেছে। কিন্তু এর কোনো বিচার হয়নি।’ কারা জমি ও ঘরবাড়ি দখল করেছে- তা ট্রাম্প জানতে চাইলে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনগুলো এসব করেছে।’ এর পরই বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আর এবার যে ছবিটির কথা বলা হয়েছে, সেই অনুষ্ঠানটিও একই দিন অর্থাৎ ১৭ জুলাইতেই হয়েছে। একই দিনে হাই প্রোফাইল আরও একটি বৈঠকে প্রিয়া সাহার উপস্থিতি জনমনে সংশয় তৈরি করেছে। এদিকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এ বৈঠক অনুষ্ঠানের পেছনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আয়োজিত ধর্মীয় স্বাধীনতা শীর্ষক সম্মেলনের অংশ হিসেবে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ইরান ও আঞ্চলিক হুমকি নিয়েও আলোচনা হয়। আলোচিত ছবিটি ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার টুইটারে শেয়ার করে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ লিখেছেন, ‘গতকাল আমি বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ্য বৈঠক করেছি। তিনি পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করবেন।’ কাৎজ যে টুইটার পোস্ট দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনি ও বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন এবং হাসাহাসি করছেন। আর তাদের ঠিক পেছনেই বসে আছেন বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা। তার নতুন এ ছবিটি সম্পর্কে একটি বিষয় খেয়াল করার মতো। তা হচ্ছে, ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আয়োজিত নতুন ছবির এই সম্মেলনের বিষয়বস্তু একই। আর তা হচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা। যে প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত থেকেছেন, একই প্রক্রিয়ায় হয়তো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রিয়া সাহা। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন, এই সম্মেলনেও তেমন কিছু করেছেন কিনা সেটাই সবাইকে ভাবাচ্ছে। সেখানে প্রিয়া সাহা বেফাঁস কোনো মন্তব্য করেছেন কিনা তা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা খোঁজখবর নিচ্ছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আলাদা বৈঠক ও কথা বলেছেন কিনা সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো মহল প্রিয়া সাহার এ কর্মকা কে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছে। হঠাৎ করেই আলোচনায় উঠে আসা এই নারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। আদালত সেই মামলা আমলে না নিলেও প্রিয়া সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিচারের আওতায় আনার ঘোর দাবি উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *