রাস্তায় অক্সিজেনসহ ছেলেকে আটকে রাখায় বাবার মৃত্যু, এএসআই বরখাস্ত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :

 

 

 

 

 

করোনা উপসর্গে অসুস্থ বাবাকে বাঁচাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় পুলিশের এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার ছেলেকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে ছেড়ে দিলেও অক্সিজেনের অভাবে ততক্ষণে মারা যান বাবা। মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক এমন অমানবিক ঘটনার অপরাধে সাতক্ষীরা ইটাগাছা ফাঁড়িতে দায়িত্বরত সেই এএসআই সুভাষকে রাতেই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করেছে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। একই সাথে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

 

 

 

তার ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার। ‘লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছো কেনো’- এমন প্রশ্নে তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন ওই এএসআই। অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন নিয়ে যাচ্ছি বলা হলেও দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। বাড়িতে যেয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে বাবা মারা গেছেন।

 

 

 

 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওলিউল ইসলাম বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচানো যেত। তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

 

 

 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদার বলেন, ওলিউল নামের ছেলেটি মোটরসাইকেলে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বেপরোয়া গতিতে আসছিল। গতিরোধ করে তাকে কাগজপত্র দেখাতে বলি। কাগজ দেখাতে না পারায় গাড়িটি আটক করে রেখে তাকে অন্য একটি ইজিবাইকে সিলিন্ডার নিয়ে চলে যেতে বলি। সে মোটরসাইকেল না নিয়ে যাবে না বলে রাজি হয়নি। বিষয়টি ট্রাফিক ইন্সপেক্টরকে জানালে তিনি মোটরসাইকেলটি ছেড়ে দিতে বলেন। পরে শুনলাম তার বাবা মারা গেছেন।

 

 

 

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, ইতিমধ্যে এ ঘটনায় এএসআই সুভাষ চন্দ্র শিকদারকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) ইকবাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ও ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তারেক আজিজ।

 

 

 

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, অপরাধী যে-ই হোক ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যেই সুভাষ চন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *