যেভাবে ছড়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস ও কথাবার্তায় করোনাভাইরাস

অনলাইন ডেস্ক :

 

 

 

 

 

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, আস্তে বা জোরে কথা বলা, রেগে কথা বলা, হাসি-ঠাট্টা করা, বক্তৃতা দেওয়া, গান গাওয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়া ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় নাক-মুখ থেকে পানি-মিউকাস মেমব্রেন রস নিঃসৃত যে বাতাস বের হয় তাকে রেস্পিরেটরি পার্টিকল বলে, যার মাধ্যমেই মূলত করোনা সংক্রমণ ঘটে।

 

 

 

করোনাভাইরাসের জীবাণু রেস্পিরেটরি পার্টিকলের আশ্রয়েই হয়, যা রেস্পিরেটরি ড্রপলেট আকারে শ্বাস-প্রশাসের সঙ্গে বের হয়ে আসে।

 

 

 

রেস্পিরেটরি পার্টিকলের সাইজ ১-২০০০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। এক মাইক্রোমিটার এক সেন্টিমিটারের ১০ হাজার ভাগের এক ভাগ।

 

 

 

এটি আবার দুই ধরনের। যেমন—

রেস্পিরেটরি এরোসল
শীতকালে কথা বলার সময় নাক-মুখ থেকে নিঃসৃত পানি-মিউকাস মেমব্রেন মিশ্রিত যে বাতাস বের হয়, বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে আসা মাত্র ধোঁয়ার মতো দেখায়, তা-ই রেস্পিরেটরি এরোসল।

 

 

►    এর মাধ্যমে সংক্রমণ হলে তাকে এয়ারবর্ণ সংক্রমণও বলে। এই প্রক্রিয়ায় করোনা সংক্রমণ ঘটে মাত্র ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। বাকি ৯৯ শতাংশ সংক্রমণ ঘটে জীবাণুঘটিত হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করার মাধ্যমে।

 

 

►    রেস্পিরেটরি এরোসল খানিকটা স্থির বাতাসে, বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে ২-৩ ঘণ্টা ভেসে বেড়ায় এবং সংক্রমণ ঘটায়।

 

 

►    এর আকার ১-৫ মাইক্রোমিটার। অর্থাৎ এক সেন্টিমিটারের ১০,০০০ ভাগের ২,০০০ ভাগ।

 

 

►    শীতকালে কথা বলার সময় রৌদ্রালোকে খালি চোখেই দেখা যায়।

 

 

►    প্রবহমান বাতাসে রেস্পিরেটরি এরোসল অনেক দূর পর্যন্ত গেলেও এ প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

 

 

রেস্পিরেটরি ড্রপলেট
জোরে কথা বলা, বক্তৃতা প্রদান, হাসি-কান্না, গান-বাজনা, হাঁচি-কাশির সময় প্রবল বেগে মিউকাস রস-বাতাস-পানি মিশ্রিত যা কিছু বের হয় তা মূলত রেস্পিরেটরি ড্রপলেট।

 

 

►    এটি স্থির বাতাসে খুব দ্রুতই মাটিতে পড়ে যায়।

 

 

►    এর আকার ৫-২০০০ মাইক্রোমিটার। অর্থাৎ এক সেন্টিমিটারের ২,০০০ ভাগ থেকে ৫ ভাগ। হাঁচি-কাশি, বক্তৃতা, গান ও জোরে কথা বলার সময় অনায়াসে এটি দেখা যায়।

 

 

►    রেস্পিরেটরি ড্রপলেটগুলো বাতাসের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিন ভাগ হয়ে যায়। একটা অংশ ড্রপলেট আকারে সঙ্গে সঙ্গেই এক মিটারের মধ্যেই মাটিতে পড়ে যায়। একটা অংশ রেস্পিরেটরি ড্রপলেট ভেঙে রেস্পিরেটরি এরোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়ায় রূপ নেয় এবং বাতাসের প্রবাহ ভালো থাকলে অনেক দূর পর্যন্ত যায়। এই দুই অবস্থায় বিশেষ করে রেস্পিরেটরি ড্রপলেট নিজের জামা-কাপড়, চেয়ার-টেবিলে পড়ে যায় এবং  ফোমাইট থেকে অন্যদের সহজেই আক্রান্ত করে।

 

 

করোনাভাইরাসের কিছু বৈশিষ্ট্য
►    যত বেশি ভাইরাস দেহে ঢুকবে, যত বেশি বয়স হবে, রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম যত বেশি দুর্বল হবে সংক্রমণ তত বেশি মারাত্মক হবে।

 

 

►    গ্রীষ্মকালে বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের কারণে (ব্যতিক্রম ছাড়া) সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে (ব্যতিক্রম বলতে, ভাইরাস যখন এমন ভেরিয়েন্টে রূপ নেয়, যখন সর্বাবস্থায় প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করে)।

 

 

►    গ্রীষ্মকালে ২০-৪০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার বেশি এবং শীতকালে বয়স্কদের আক্রান্তের হার বেশি থাকে।

 

 

►    ড্রপলেট ইনফেকশন (৫-২০০০ মাইক্রোমিটার সাইজ) প্রতিরোধে ফেস মাস্ক বেশ কার্যকর। কিন্তু রেস্পিরেটরি এরোসল বা ড্রপলেট নিউক্লিয়াই (১-৫ মাইক্রোমিটার সাইজ) প্রতিরোধে কম কার্যকর। তবে এন৯৫ মাস্ক বা ডাবল সার্জিক্যাল মাস্ক ৯৫ শতাংশ কার্যকর।

 

 

►    আবদ্ধ ঘর, এক রুমে গাদাগাদি বসবাস, ফ্যান ছাড়া গরমে হাঁসফাঁস, স্প্লিট এসি রুম, লোকসমাগম, বাজার, মিছিল-সভা ও বন্ধ দরজা-জানালা—এগুলো করোনা সংক্রমণের বড় কারখানা।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *