বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতের সুদ হার নির্ধারণ করলো

অনলাইন ডেস্ক :

 

ঋণের সুদের পরে এবার আমানতের সুদ হার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফা হার অতিমাত্রায় হ্রাস পেলে ভবিষ্যতে ব্যাংকে আমানতের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

ফলে ব্যাংকে তিন মাস বা তার বেশি মেয়াদী আমানতের সুদ হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কোনোভাবেই কম হবে না। গত জুন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারে ঋণের সুদ হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

রবিবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সার্কুলার অবিলম্বে বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও ব্যাংকিং খাতে দায়-সম্পদের ভারসাম্যহীনতা রোধকল্পে তিন মাস ও তদূর্ধ্ব মেয়াদী আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফা হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত নির্দেশনা প্রদান করা যাচ্ছে: ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদী আমানত এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকতা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরোত্তর পাওনাসহ বিবিধ পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে গঠিত তহবিল বাবদ রক্ষিত যেকোনো পরিমাণ মেয়াদী আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফা হার মূল্যস্ফীতি হার অপেক্ষা কোনোক্রমেই কম নির্ধারণ করা যাবে না; বর্ণিত আমানতের ওপর কোনো নির্দিষ্ট মাসে সুদ বা মুনাফা হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওই মাসের অব্যবহিত তিন মাস আগের মূল্যস্ফীতি হারকে (বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১২ মাস ভিত্তিক গড়) বিবেচনায় নিতে হবে। ঋণ বা বিনিয়োগের ওপর সুদ বা মুনাফা হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।

 

সার্কুলারে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদ/মুনাফা হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংক থেকে পাওয়া বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ ব্যাংক কর্তৃক মেয়াদী আমানতের ওপর মূল্যস্ফীতি হারের চেয়ে কম হারে সুদ/মুনাফা প্রদান করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র আমানতকারীসহ অন্যান্য আমানতকারীদের একটি অংশ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ব্যাংকে রক্ষিত আমানতের সুদ/মুনাফার ওপর নির্ভরশীল। ব্যাংকে রক্ষিত মেয়াদী আমানতের ওপর মূল্যস্ফীতি হারের চেয়ে কম হারে সুদ/মুনাফা প্রদান করায় আমানতকারীদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া মেয়াদী আমানতের ওপর সুদ/মুনাফা হার অত্যধিক হ্রাস জনসাধারণের সঞ্চয় প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে আমানতকারী কর্তৃক তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখার পরিবর্তে ঝুঁকিপূর্ণ খাতসহ বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে।

 

ব্যাংক-তহবিলের প্রধান উৎস হলো বিভিন্ন ধরনের আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত আমানত। আমানতের ওপর সুদ বা মুনাফা হার অতিমাত্রায় হ্রাস পেলে ভবিষ্যতে ব্যাংকের আমানতের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ফলে ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য এ নির্দেশনা জারি করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *