‘লাভের কথা বলে ২০০ কোটি টাকা নিয়ে গাঢাকা, প্রতারক চক্রের পাঁচজন গ্রেপ্তার’

অনলাইন ডেস্ক :

 

প্রথমে তারা সবাইকে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে সমবায় সমিতির সদস্য করে। এরপর ধর্মপ্রাণ মানুষকে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করে। এ পদ্ধতিতে সুদমুক্ত বিনিয়োগে বেশি পরিমাণে লাভ হবে বলেও আশ্বস্ত করে তারা। তাদের কথায় বিশ্বাস করে বিনিয়োগ করলেও হাজার হাজার সদস্য পাননি কাঙ্ক্ষিত সেই মুনাফা।

 

গাঢাকা দেন সমিতির কর্তারা। মুনাফা দূরের কথা, সদস্যদের আসলই গেছে।

 

নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান এভাবে অন্তত পাঁচ হাজার সদস্যের ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শাহ আলমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন দেলোয়ার হোসেন শিকদার, কাজী মানে উল্লা, সুমন মোল্লাহ ও আ. হান্নান মোল্লাহ।

 

গত শনিবার (১২ মার্চ) নরসিংদী থেকে তাঁদের গ্রেপ্তারের পর গতকাল রবিবার (১৩ মার্চ) ঢাকায় কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হয়।

 

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, শাহ আলম ২০১০ সালে নরসিংদীতে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে এ প্রতারণা শুরু করেন।

 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রতারণার ঘটনা প্রচারে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য ও আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। নরসিংদী জেলার পাঁচ থেকে ছয় হাজার সাধারণ মানুষ একটি প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়েন। তাঁরা ব্যবসায় অতিরিক্ত লাভের আশায় শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হন। প্রতারকচক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান।

 

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় গুটিয়ে নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সবাই গাঢাকা দেন। এ ঘটনায় নরসিংদী জেলার পলাশ থানায় একটি মামলা করা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসন ও সমবায় অধিদপ্তরেও অভিযোগ দেন। ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার প্রত্যাশায় নরসিংদীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১-এর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি করে চক্রটিকে শনাক্ত করে।

 

তিনি আরো বলেন, চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেন। তাঁরা আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তিদের পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিতেন। পরে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যাবসায়িক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করেন তাঁরা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো শাহ সুলতান এমসিএস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, স্বদেশ টেক্সটাইল লিমিটেড, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিমিটেড ও শাহ সুলতান প্রপার্টিজ লিমিটেড।

 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শাহ আলম সদস্যদের টাকা তাঁর অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন। ওমর ফারুক ও  মাসুদ রানা সদস্যদের টাকায় নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে পাঁচ-ছয় একর জমি নিজেদের নামে কিনেছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে সাত-আট একর জমি রয়েছে বলে জানা যায়। সূত্র:কালেরকণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *